রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেছেন, আমরা বলি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির জন্মই লেজুড়বৃত্তি করার জন্য। যার জন্ম থেকেই লেজুড়বৃত্তি সেটা রেখে কিভাবে আমরা সংস্কার করবো?
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশনের আয়োজনে ‘ছাত্র রাজনীতি সংস্কার প্রস্তাবে ছাত্র নেতৃবৃন্দের বোঝাপড়া’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি সংস্কারের আগে আমাদের প্রশ্ন তুলা উচিৎ ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না। এই যেই ছাত্র রাজনীতির চর্চা দেখি, এটা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই রয়েছে, বিশ্বের আর কোথাও এমন ছাত্র রাজনীতি নেই। এই রাজনীতি শব্দটি যুক্ত করেই ছাত্রদের যে মূল আদর্শ, সেখান থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর এখন আমাদের এসব নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে।
ফাহিম রেজার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভাটি দুটি সেশনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথামাংশে বক্তাদের বক্তব্য এবং দ্বিতীয়াংশে প্রশ্নোত্তরের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
মতবিনিময় সভায় রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল মোহাইমেন বলেন, ছাত্র রাজনীতি সংস্কারের একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা প্রয়োজন। এজন্য আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই। আমাদের নিজেদের দ্বারা এ সংস্কার সম্ভব না। ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদি সব সংগঠনই বিভিন্ন দাবি করবে। তাই এটা যদি আমাদের ভিতরে না থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেন্দ্রীক একটা নীতিমালা থাকা দরকার। আমরা এখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাচ্ছি কিন্তু কিছুদিন পর আরেকটা সংগঠন বা দল চলে আসবে ক্ষমতায় তখন তারা আগের মতো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। যদি আমরা যৌক্তিকভাবে ছাত্র রাজনীতি সংস্কারে একটা রূপরেখা না দিতে পারি, মডেল উপস্থাপন না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে দেখবেন আবারো আগের মতো চলবে। এজন্য আমরা চাই, এমন একটি ছাত্র রাজনীতি বা সংস্কার আসুক যেই সংস্কারের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হতে পারে, যেই আসুক না কেন, সাধারন শিক্ষার্থীরা সকলেই চাইবো এই ধরনের সংস্কারের রূপরেখা যেন থাকে আর আমরা এটাই বাস্তবতায়ন করে ছাড়বো।
মতবিনিময় সভায় রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, কীভাবে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীবান্ধব করতে পারি এবং কীভাবে পরিবেশ সুন্দরভাবে বজায় রাখতে পারি সে উদ্দেশ্যেই আজকের এই আলোচনা। ছাত্রদলের উদ্দেশ্য আগামী বাংলাদেশ শিক্ষা এবং জাতিকে শিক্ষিত করা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখা। এজন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিগত ১৫ বছর যে রাজনৈতিক প্র্যাকটিস বাংলাদেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চর্চা হয়েছিল সেটা আমরা রাজনীতির মধ্যে বুঝি না। আমরা বিগত সময় দেখেছি সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি বা কোন একটা পদ পেলে তিনি মনে করতো আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক, হলের কোনো একটা পদ পেলে মনে করতো তিনি হলের মালিক। ছাত্র রাজনীতি মানে মনে করেছিল হল থেকে ফ্রি খাওয়া, পেশী শক্তি দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে নিজের আধিপত্য বিস্তার করা। কিন্তু প্রকৃত ছাত্র রাজনীতির ডেফিনেশন এটা না। আমরা এই রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।
সভাপতির বক্তব্যে স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, আমরা স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশন চেয়েছি যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ একটি প্লাটফর্মে এসে তাদের কথা বলুক। আর এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ছাত্র রাজনীতি কেমন হবে এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি কেমন হবে সেই বিষয়ে একটি ঐক্যমতে পৌঁছাবে। সেই লক্ষ্যেই মূলত আজকের এই আয়োজন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন- প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম, রাবি রিসার্চ সোসাইটির সাবেক সভাপতি সাকিবুল হাসান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবি সমন্বয়ক তাস্বীন খান। এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :