ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এ এক অন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম

এ এক অন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ঢাবি: এ যেন এক অন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখছে দেশ। মানুষের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। একে অপরের উপকারের মধ্যেই মানবতার উদারতা প্রমাণিত হয়। ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল টানা বৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে দেশের ১২টি জেলায়।বন্যার্তদের জন্য আজ ২য় দিনের মতো ঢাবির টিএসসিতে গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ট্রাক, রিক্সা ও ভ্যানে করে খাদ্যদ্রব্য ও জরুরি পণ্য নিয়ে আসছেন টিএসসিতে।

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নিজের জমানো টাকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ। শুধু তায় নয়, করপোরেট পেশাজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর-রিকশাচালকসহ নানা বয়স, শ্রেণি, পেশার মানুষ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে।

একের পর এক রিকশা, প্রাইভেট কার, ট্রাক, ঠেলাগাড়ি আসছে, নামানো হচ্ছে শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, কপড়, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সকল শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের মিলনমেলা বহু বছর দেখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বহু বছর দেখেনি দেশবাসী।

দেশের ১২টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে গত বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলেছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে গতকাল (২২ আগস্টে) মোট ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা ও বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহ করেছে তারা।  টিএসসি এলাকায় ক্ষণে ক্ষণে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, চলাচলের রাস্তায় ভিড় করবেন না, শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল বিভাগ ও আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বন্যার্ত মানুষের জন্য ফান্ড সংগ্রহ, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় জামা-কাপড় সংগ্রহ করছেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গণত্রাণ কর্মসূচিতে কাজ করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এফ এ শাহেদ বলেন, ঢাকা কলেজ, ইডেন, তিতুমীর কলেজসহ অধিভুক্ত সকল কলেজই বন্যার্ত মানুষের জন্য গণত্রাণ ও ফান্ড সংগ্রহ করছে। টিএসসিতে এসে যেটা দেখতে পেলাম এটি ছাত্র এবং গণমানুষের স্বদেশ প্রেম এবং মানবতার এক অনন্য নিদর্শন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি যে সকল সংকটে এক এবং অভিন্ন তা আরো একবার প্রমান করলো। টিএসসিতে এক অ পাশে গণ ত্রাণ সংগ্রহ বুথ বসানো হয়েছে এখানে তালিকাভুক্ত করে ত্রাণ রাখা হচ্ছে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষে। প্যাকেজিং করে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায়। এগুলো কাভার্ড ভ্যানে করে বন্যা কবলিত এলাকায় পৌঁছানো হবে।

গতকাল রাতেই কয়েকটি গাড়ি ত্রাণ নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় রওনা হয়েছে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজিব বলেন, গতকাল থেকে ত্রাণ সংগ্রহ চলছে।  ব্যাংকে, বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল আর্থিক সেবা ও নগদ টাকা মিলিয়ে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৩ টাকা উঠেছে। আজকে সকাল থেকেই অসংখ্য মানুষ ত্রাণ সহায়তা ও নগদ টাকা নিয়ে আসছেন। আজকে রাতে শুধু নগদ অর্থের পরিমাণই ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে ধারণা করা হচ্ছে।

শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে মানুষ এক হয়ে কাজ করার বিষয়টি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে উদ্দেশ্য ছিল অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে সম্প্রীতির দেশ গড়তে চেয়েছিল সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে বলে মন্তব্য করছে অনেকেই।

এদিকে, এমন বিপর্যয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালীসহ দেশের আরও অনেক এলাকা বন্যার ভয়াল ছোবলে আক্রান্ত। কঠিন এই সময়ে আমাদের সবার দায়িত্ব দুর্গতদের সহায়তা করার। ব্যক্তিগতভাবে কাকে কার পছন্দ, কাকে অপছন্দ, কার কী মতবাদ, এসব ভাবার সময় এখন নয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে মানুষের পাশে থাকার জন্য।

নিজের দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানালেন তামিম। বলেন, আমি নিজের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। যে সংস্থা ও সংগঠনগুলোকে আমার কাছে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে, তাদের মাধ্যমে সহায়তা করেছি। সাধ্যমতো আরও করে যাব ইনশাল্লাহ।

বন্যার্তদের সহায়তায় এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে সেনাবাহিনীর সকল পদবীর সদস্যরা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

 

আরবি/এস

Link copied!