আয়তনের দিক থেকে দেশের অন্যতম ছোট ক্যাম্পাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ছোট হলেও বাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের যেমন অভাব নেই, তেমনি যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয় সেগুলো। বেজমেন্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাফেরার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যও।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিজ্ঞান অনুষদ মাঠ, কেন্দ্রীয় মসজিদের পার্শ্ববর্তী স্থান, কলা ভবন ও মুজিব মঞ্চের সামনে প্রতিদিনই শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। এছাড়াও শান্ত চত্বর, কাঁঠাল তলা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে ও দ্বিতীয় গেইট জুড়ে রাখা হচ্ছে এসব গাড়ি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ছোটখাটো একটি বাস টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিজস্ব পরিবহণ পুলের বাসের পাশাপাশি শিক্ষকদের গাড়ি পার্কিংয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনে নীচে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বেজমেন্টের অবস্থা নাজেহাল। অন্ধকার, অধিক ঢালু, ভিতরে ঢুকতে কিংবা বের হতে সমস্যাসহ নানা কারণে বেজমেন্টে মোটরসাইকেল-গাড়ি রাখতে চায় না চালক ও শিক্ষার্থীরা। সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত কিছু মোটরসাইকেল আর ধুলো জমা কয়েকটি মাইক্রোবাস পড়ে রয়েছে।
এছাড়াও বেজমেন্টে অরক্ষিত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, ময়লা-আবর্জনা, খাতা-পেপার, নষ্ট গাড়ির চাকা, ভাঙা বেঞ্চ, অব্যবহৃত আলমারী, টেবিলসহ নানা ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদিকে বেজমেন্টে পুরো ভবনের বৈদ্যুতিক ও টেলিফোন সংযোগ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এসব আগুনের সংস্পর্শে এলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও।
এদিকে বেজমেন্টে ময়লা থাকায় অনেকে গেটের সামনে, সাইড ঘেঁষে মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাখে। এতে ভিতর থেকে গাড়ি বের করার সময় এমনকি ঢালু জায়গা দিয়ে নিচ থেকে উপরে ওঠার সময় হঠাৎ পিছনে আসতে চালকদের সমস্যায় পড়তে হয়। ইদানীং বেজমেন্টে রাখা গাড়ির পার্টস ও তেল চুরির ঘটনা ঘটেছে যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি অপরাধের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় র্যাব-১০। সন্ধ্যার পর প্রায়ই বেজমেন্টের ভেতরে বসে মাদকের আড্ডা। বেজমেন্টটি দেখাশোনার জন্য আলাদা নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিলেও প্রায়ই তাকে অন্যত্র ডিউটি করতে দেখা যায়।
বেজমেন্টে মোটরসাইকেল নিয়ে আসা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী বলেন, ‘অন্যান্য ক্যাম্পাসে বেজমেন্ট যে রকম আলোকসজ্জা থাকে আমাদের এখানে সেটা নেই। অন্ধকার ছাড়াও সেখানে অনেক ময়লা আবর্জনা থাকায় আমরা বেজমেন্টের বাহিরে পার্কিং করি। আমরা চাই জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুক।’
বেজমেন্টে না রেখে কেনো যত্রতত্র পার্কিং এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষকের গাড়ি চালক মো. সাদ্দাম বলেন, ‘বেজমেন্টে আলো বাতাসের স্বল্পতার কারণে সেখানে গাড়ি রাখা হয় না। ওই জায়গাটা সবসময় অন্ধকার ও গরম থাকে। আর গাড়ি পার্কিং করে এর ভিতরে আমরা বসে থাকি। সেখানে তা সম্ভব না।’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহারের ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার গোলাম মাওলা বলেন, ‘ম্যাম যেখানে গাড়ি থেকে নামে সেখানেই রাখতে বলে। বেজমেন্টে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। আর ম্যাম দ্রুত চলে আসবেন বলে যান, তাই বেজমেন্টে গিয়ে গাড়ি রাখা হয় না।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করায় ক্যাম্পাসে ঠিকভাবে হাঁটাচলা করা যায় না, আড্ডাও দেওয়া যায় না। ক্যাম্পাসের যে পাশেই চোখ যায় শুধু বাস আর বাস। আর যত্রতত্র পার্কিংয়ের দরুণ বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির পর সৃষ্ট মানবজটে ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান রনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কে, কোথায় গাড়ি পার্কিং করবে বা বেজমেন্টেই গাড়ি পার্ক করতে হবে- এমন কোনো কিছু লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া নেই। তবে বেজমেন্টে গাড়ি রাখতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। আর গেইটেও বলা রয়েছে যেনো বহিরাগত গাড়ি ভেতরে রাখতে দেওয়া না হয়। বেজমেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গাড়ি রাখা হয়। অনেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি পার্কিং করে। ক্যাম্পাস চলাকালে গাড়িগুলো রাখা হয়, পরবর্তীতে আর থাকে না। আবার অনেকের গাড়ি অল্প সময়ের জন্য রাখতে চায়। তাই কিছু বলা যায় না। কাউকে তো আর জোর করে বেজমেন্টে রাখানো যায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘বেজমেন্টের অবস্থা আরও খারাপ ছিলো। আমি আসার পর বেশকিছু সংস্কার করেছি। আরও কিছু সংস্কার প্রয়োজন। দ্রুত সেগুলো করার চেষ্টা চলছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিলো। আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের ওখানে গাড়ির একটি ওয়ার্কশপ তৈরি ও কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনা জায়গায় বাসগুলো রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন একাডেমিক ভবনের বেজমেন্টে শিক্ষকদের গাড়িসহ ছোট গাড়িগুলো রাখার বিষয়ে জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :