ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সজিব আহমেদ সায়ান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:২১ পিএম

ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ছবি রুপালী বাংলাদেশ

ঢাবি: শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চেপে বসেছিল লেজুরবৃত্তিক দলীয় রাজনীতি। হলের সিট বরাদ্দ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রম সর্বত্র ছিল দলীয় রাজনীতির প্রভাব। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। বাংলাদেশ শুরু করে এক নতুন অধ্যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন রাজনীতি চান এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে কথা বলেছে রূপালী বাংলাদেশ। 

দলীয় রাজনীতির বিষয়ে তাদের মধ্যে ভিন্ন মত পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, বিদ্যামান ছাত্র রাজনীতি শিক্ষা পরিবেশের জন্য হুমকি, ফলে এর সংস্কার করা হোক। কেউ বলছেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে। তবে কেউ কেউ রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ চাইছেন। 

ক্যাম্পাসে রাজনীতি একেবারে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনিন। তিনি বলেন, যেহেতু মানুষের সাংগঠনিক অধিকার রয়েছে, তাই ক্যাম্পাসে রাজনীতি একেবারে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি নই। এটা নিষিদ্ধ করার কোন সুযোগও নেই। শিক্ষকরা রাজনীতিক ব্যাক্তিদের মতো সেভাবে জড়ায় না। তবে জিম্মি করার বা দখলদারিত্বের রাজনীতি পরিহার করে সব দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী মনে করেন, সাদা-নীল হলুদ রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলে শিক্ষা পরিবেশ ও জ্ঞানচর্চা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। 

তিনি বলেন, এতদিন ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির যে ধারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল, সেটি বন্ধ করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ মোটামুটি ঠিকঠাক হলেও পরবর্তী পদগুলোতে দলীয় প্রভাব থেকে যাচ্ছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জনান, তারা সকল ধরনের দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় চান। যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ থেকে হলে বৈধ সিট বরাদ্দ দেওয়া, কেন্টিনের খাবারের মান উন্নয়ন, রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের হয়রানি বন্ধ, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার বিলোপ, মাদক নিষিদ্ধসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। 

ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি, সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয় বলে মনে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছমা আক্তার রানী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশ ও মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাজনীতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি, সহিংসতা এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ দেখা যেত। তবে চবিশের গণ-অভ্যুত্থান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ও মুক্তচিন্তার পরিবেশ তৈরি করার সুযোগ দিয়েছে। 

আছমা এমন বিশ্ববিদ্যালয় চান, যেখানে শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগী হবে, যা দেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে নেবে, যা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও সুনাম কুড়াবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমান সুযোগ, হলে মানসম্মত আবাসন, সুষম ও স্বল্প দামে খাদ্য ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ঝুটন তালুকদার বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হবে মুক্ত জ্ঞানচর্চার এমন এক স্থান, যেখানে কোনপ্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থাকবে না। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বোচ্চ মনোনিবেশ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা-গবেষণায় তাদের মেধা ও মননের যথাযথ স্ফুরণ ঘটিয়ে সর্বদা জাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখবে। 

 

আরবি/এস

Link copied!