ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

জবিতে হারিয়ে যাচ্ছে হলদে খাম ও লাল ডাকবাক্স

নাফিজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ১১:৪২ এএম

জবিতে হারিয়ে যাচ্ছে হলদে খাম ও লাল ডাকবাক্স

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক বাহক হলেও বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তির আগ্রাসনে অনেকটাই স্মাণ হয়েছে দেশের আরেকটি ইতিহাস।

প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আজ হলদে খাম আর লাল ডাকবাক্স ছেড়ে গিয়েছে নীল মেসেঞ্জার, সবুজ হোয়াটসঅ্যাপ, নীল টেলিগ্রাম ও লাল-নীল-সবুজ-হলুদের ইমেইলে। তাই ডিজিটাল এ যুগে ডাকঘরের আবেদন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে । হয়তো আগামীর শিশুদের সঙ্গে ডাকবাক্সের দেখা হবে জাদুঘরে।

ইতিহাসের ধারক হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো টিকে আছে লাল বক্সের পোস্ট অফিস। একসময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকবাক্সে অফিসিয়াল চিঠির পাশাপাশি আসত ব্যক্তিগত চিঠিপত্র। তবে এখন আর আগের মতো তাতে চিঠি আসে না। তাই তো মরিচায় ক্ষয়ে যাওয়া ডাকবাক্সে তামাটে রং ধরেছে বহু আগে। আগের মতো নেই তত লাল বক্সের কদর।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকবাক্স রয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিঠি বিলি করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন দুজন ডাকপিয়ন। চিঠিপত্রের বেশিরভাগ তালাকসংক্রান্ত। তাছাড়াও  মামলা-মোকদ্দমার চিঠি, অফিসিয়াল চিঠির পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত চিঠি এখনো আসে। তাছাড়াও কিছু লোক সরকারি স্টাম্প কিনতে আসে পোস্ট অফিসে।

পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন আবদুর রহমান বলেন, বর্তমানে কিছু সংখ্যাক দাপ্তরিক চিঠিপত্র আসে। মামলা ও তালাকের চিঠি গুলো প্রায়ে ডাকযোগ প্রধান করার কারণে এখানে আসে। আমাদের এখন আর আগের মতো কর্মব্যস্ত থাকতে হয় না। প্রতিদিন কত চিঠি আসে এবং কত পাঠানো হয়, তা পোস্ট মেশিনের মাধ্যমে জানা যায়। সবাই এখন মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে তথ্য আদান-প্রদান করেন।

হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ছোটবেলায় প্রচুর চিঠি লেখা হতো। কিন্তু সেই চিঠিগুলো কখনও ডাকবাক্সে বন্দি হতো না। কারণ চিঠিগুলো লেখা হতো পরীক্ষার খাতায়। মার্কসের আশায় লিখলেও সেই চিঠিগুলোর নান্দনিক মূল্য কিন্তু কম নয়। চিঠির শুরুতেই একটি শব্দ থাকত ‍‍`প্রিয়‍‍`। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চিঠির মতো চাপা পড়ে গেছে প্রিয় শব্দটাও। আমরা এখন বলি সে আমার ‍‍`ক্রাশ‍‍`, কখনও বলি না সে আমার প্রিয়।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রেদোয়ান আহম্মেদ বলেন, মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের দাপটে ফাঁকা পড়ে থাকে ডাকবাক্সগুলো । ফাঁকা পড়ে আছে বললে ভুল হবে। সেখানেও হয়তো নানবিধ দাপ্তরিক চিঠির স্থান হয়। কিন্তু সেই চিঠিগুলোতে কখনোই প্রিয় সম্বোধন থাকে না। জবির ডাকবাক্স ‍‍`প্রিয়‍‍` দিয়ে ভরে যাক সেই কামনাই করছি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, প্রিয়জনদের নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের প্রচেষ্টাই ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলতে পারে। তাহলে দেশের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে। ভাব প্রকাশে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা, রক্ষা হবে ডাকবক্স ও হলদে খাম।

আরবি/জেডআর

Link copied!