জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবহিভুর্ত হত্যা ও মব জাস্টিস বন্ধসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় চার দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো- সারা দেশে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ এবং মব জাস্টিস বন্ধ করতে হবে; ৩৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লার হত্যার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; নিরাপত্তা শাখায় কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙে শামীম মোল্লাকে মারধরের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তা শাখা ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের ভূমিকা তদন্ত করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ ও ১৭ জুলাইয়ে হামলাকারীদের নামে মামলা করতে হবে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা শামীমের মৃত্যু ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি থাকা দুই সদস্যকে নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্যমতে, তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক স্বাধীন সেন ও অধ্যাপক আনিছা পারভীন শামীমের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়েছেন। এছাড়া উপাচার্য বরাবর এ ঘটনার বিচারের পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে কতৃর্ত্ববাদীতার অভিযোগ এনে তার অবসানের দাবি জানান। তারা বিচার প্রার্থী হয়ে তদন্ত কমিটিতে থাকলে তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত হতে পারে।
মানবন্ধনে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান বলেন, ‘শামীম মোল্লার হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচার চাওয়া দুইজন শিক্ষককে তদন্ত কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এতে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছি। বিচারপ্রার্থী যদি বিচারের দায়িত্বে থাকে অবশ্যই সেখানে তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিদ্রুত সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে এই কমিটিকে বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করা হোক। এঘটনায় প্রশাসনের কাছ থেকে সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান কবির রাসেল বলেন, ‘মব জাস্টিস মাধ্যমে নিরাপত্তা অফিসের তালা ভেঙ্গে কারা হত্যা করলো? সেসময় নিরাপত্তা কর্মীরা কোথায় ছিলো?’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়ার পরও আজ আমরা অনিরাপদ, এ অনিরাপদ বাংলাদেশ চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ যদি মব জাস্টিস করতে চায়, অস্থিতিশীল করতে চায় তাদেরকে এই ক্যাম্পাসে চাইনা। ১৮ তারিখ প্রক্টর অফিসে একজন লোককে পিটায় মারে নিরাপত্তা কর্মীদের সামনে, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা করতে পারে নাই প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো যারা ১৫ জুলাইয়ে হামলার সাথে জড়িতদের তালিকা প্রকাশ করতে পারে নাই। অতিদ্রুত সেই তালিকা প্রকাশ করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তদন্ত কমিটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তির বিষয়ে মন্তব্য জানতে অধ্যাপক আনিছা পারভীনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, কোনো প্রশ্ন না শুনে তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলাকালে কোনো কথা বলতে চাইনা সাংবাদিকদের সাথে।’
এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :