সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

গুমের শিকার সেই ব্যবসায়ী এবার মিথ্যা মামলায় জেলে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০৯:১৫ এএম

গুমের শিকার সেই ব্যবসায়ী এবার মিথ্যা মামলায় জেলে

ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের  জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যবসায়ী খান মো. আক্তারুজ্জামানকে এবার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শুক্রবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের কসমোপলিটন সেন্টারের অনলাইন গ্রুপের অফিসে গিয়ে কথা হয় আক্তারুজ্জামানের ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদুল ইসলাম রাজুর সঙ্গে। তিনি জানান, ব্যাবসায়িক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আক্তারুজ্জামান গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর থেকেই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন ইসিবি চত্বরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা করছে ওই চক্র। ইতোমধ্যে একটি দোকানের তালা ভেঙে দখল নিয়েছে। সেখানে বাধা দিলে তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া আক্তারুজ্জামান গ্রেপ্তারের পর থেকেই বিরোধী পক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সামাজিকভাবে তাকে হেয় করছে।

আক্তারুজ্জামানের স্বজনরা জানান, রাজধানীর ইসিবি চত্বরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর সঙ্গে। তার বিরোধী পক্ষগুলো একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভাষানটেক থানার এক হত্যা মামলার মিথ্যা আসামি করা হয় আক্তারুজ্জামানকে। তারা বলছেন, মিথ্যা মামলায় অহেতুক হয়রানি করা হবে না- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করার পরও ভুয়া মামলায় ১৩ ফেব্রুয়ারি আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। পরে তাকে প্রথমে ক্যান্টনমেন্ট থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন রাতে আক্তারুজ্জামান অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত ৩টায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে একদিন পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী সাজেদা আক্তার পপি জানান, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলার ভুয়া আসামি করা হয়েছে আক্তারুজ্জামানকে। পরে প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো স্কুল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করা।

সূত্র জানায়, ঢাকার সিএমএম (চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতে হলফনামার মাধ্যমে এ মামলার বাদী জানিয়েছেন, এলাকার কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে তার অজ্ঞাতসারে ভুলবশত আক্তারুজ্জামানের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলা থেকে আক্তারুজ্জামানের নাম প্রত্যাহারের জন্য প্রথমে ২৪ অক্টোবর আদালতে হলফনামার মাধ্যমে আবেদন করেন বাদী। গ্রেপ্তারের পর ১৬ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হলফনামার মাধ্যমে আসামির তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের জন্য বাদী ফের আবেদন করেন। কিন্তু জামিন হয়নি।

মামলার বাদী মো. সবুজ বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে খান মো. আক্তারুজ্জামানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার নাম কীভাবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাও আমার জানা নেই। আমি আদালতে হলফনামার মাধ্যমে আক্তারুজ্জামানের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেছি।

তিনি আরও বলেন, আক্তারুজ্জামান গ্রেপ্তারের পর আদালতে গিয়েও আমি বলেছি তিনি নির্দোষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের এএসপি খান আসিফ তপু বলেন, আমরা ডিবির রিকুইজিশনের ভিত্তিতে আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। আমরা আমাদের ডিউটি পালন করেছি মাত্র।

উল্লেখ্য, আক্তারুজ্জামান বিএনপি পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিগত সময়ে নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১৭ সালে ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন। এ ছাড়া ২০২৫ সালে র‌্যাবের হাতে গুম হন তিনি। গুমসংক্রান্ত কমিশনে করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘লে. কর্নেল আজাদ (২০১৭ সালে মারা যান) ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আক্তারুজ্জামানকে চোখ বেঁধে তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধানের নেতৃত্বে একটি কালো গাড়িতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ ছিল স্থানটি। সেখানে ৩ দিন বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকাবস্থায় ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা ও জমি দাবি করেন র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। এরপর র‌্যাবের নজরদারিতে থেকে কয়েক দফায় নগদ ২২ কোটি টাকা দিয়ে জীবন ভিক্ষা পান। তার ও তার স্ত্রীর নামে থাকা জমি বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখিয়ে তার বেশকিছু জমিও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। সে সময় আক্তারুজ্জামানের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। যার ক্ষত নিয়ে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।

আরবি/এসবি

Link copied!