রাজধানীর বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে ও কুপিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুটের ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনাটির তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তিন মোটরসাইকেলে ৭ জন দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীর গতিরোধ করে চার রাউন্ড গুলি ও কুপিয়ে লুট করে নিয়ে যায় স্বর্ণালঙ্কার। গত রোববার রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ীর নিজ বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ব্যবসায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। থানায় মামলা বা কোনো অভিযোগ না দেওয়া হলেও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গাড়ির নম্বর ট্র্যাকিং করে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া বাড়ির মালিক বা দারোয়ানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ারের স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, দোকান আর আমার নিজ (ভাড়া) বাসার দূরত্ব ১ মিনিটের। রাতে দোকানের মালামাল (স্বর্ণ) ও টাকা নিয়ে বাসায় আসেন আনোয়ার। প্রতিদিনের মতো রোববার রাতেও সব কিছু নিয়ে বাসায় আসছিলেন তিনি। এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ দুই রুম নিয়ে বনশ্রী ডি ব্লকের ২০ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা। দেশের পরিস্থিতি খারাপের কথা বলে রোববার রাত ৯টার দিকে বাসার দারোয়ান (নিরাপত্তাকর্মী) বলছিলেন, ভাইকে আজ একটু আগে আসতে বইলেন। দেশের অবস্থা ভালো না। রাতে আনোয়ার বাসার আগ মুহূর্তে গেটের সামনে দুটি মোটরসাইকেলও দেখেন দারোয়ান পিয়ারুল ইসলাম। পরে গেট তালা দেয় সে। ঠিক এর পাঁচ মিনিট পর আনোয়ার বাসায় এলে তাকে ঘিরে ধরে মোটরসাইকেল আরোহী ৭ দুর্বৃত্ত। সঙ্গে থাকা স্বর্ণ ও টাকা না দেওয়ায় আনোয়ারকে তিনটি গুলি ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে। তখন আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি। বাসার দারোয়ানও গেট খোলেনি। সবাই শুধু দেখেছে।
এ ঘটনার প্রায় এক দিন পার হয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এই ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। থানায় মামলা বা কোনো অভিযোগ না দেওয়া হলেও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গাড়ির নম্বর ট্র্যাকিং করে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া বাড়ির মালিক বা দারোয়ানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না, তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
গতকাল রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছেন তারা। এ ঘটনায় মোট সাতজন সরাসরি জড়িত। তাদের ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ওই বাড়ির দারোয়ান পিয়ারুল ইসলাম বলেন, সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে। বলছে, বাসার গেট খুলি নাই কেন। বাড়ির দায়িত্বে থাকা রেজওয়ান স্যারের নির্দেশে গোলাগুলির ঘটনার আগে আমি সবাইকে সচেতন করেছি যে দেশের অবস্থা ভালো না। সবাই যেন রাত ১১টার মধ্যে বাসায় আসেন। এর ৫ থেকে ১০ মিনিট পরই এই গোলাগুলির ঘটনা হয়। আমি ভয় পেয়ে যাই। কী দিয়ে কী হয়ে গেছে বুঝি নাই।
বনশ্রীর এফ ব্লকের বাসিন্দা তানভীর হোসেন বলেন, যারা ব্যবসা করেন তাদের দোকান বা ব্যবসা থেকে রাত ১১টার পরে বের হতে হয়। সামনে ঈদ, সবারই রাতে কাজ থাকবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি এমন হয় তাহলে আমরা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারব না। এ ছাড়া বনশ্রী সোসাইটির নেতারা যখন নির্বাচন করেন, তখন তারা ওয়াদা করেন। বনশ্রীর প্রতিটি রোডে সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা থাকলেও তার কোনো খবর নেই। সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীরাও সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ তার।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার চিকিংসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের জানান, এক সপ্তাহ আগে ডিবি পরিচয় দিয়ে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, আমাকে বলেছিল আমি নাকি অবৈধ স্বর্ণ কিনি। আমার নামে নাকি মামলা আছে। এসব কথা বলে তারা আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। পরে তাদের আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তখন আমি তাদের ফোন দিই যে ভাই সরাসরি এসে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যান। তখন ওই ব্যক্তি ফোনের ওপার থেকে জানায়- ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি, পরে এসে দেখা করব।’ এরপর আমি আবার ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে বলেছিলেন, ‘ভাই আমার সিমটি হারিয়ে গিয়েছিল ওই লোকটি প্রতারক ছিল।’ আমাকে তিনটি নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল সে নম্বরগুলো হলো - ০১৯৪১৮৯৫৫২০, ০১৭০৭২২৯০৯৫, ০১৮৪৬৭৪০৭৪৭।
আনোয়ারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, বর্তমানে সে হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছেন। তার কাঁধে একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যার কারণে তিনি ওই হাতটি এখন নড়াচড়া করতে পারছেন না। তবে সেখানে অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক্স-রে করে আমরা তার শরীরের ভেতরে যে গুলি আছে সেটি এখনো দেখতে পাইনি। ধারণা করছি, তার অণ্ডকোষে একটি গুলি লেগেছে। সেটির অপারেশন করা হবে। আবারও তার অণ্ডকোষ ও কোমরে এক্স-রে করা হবে। তাহলে বলা যাবে সম্পূর্ণভাবে যে তার শরীরে কোনো গুলি এখনো আছে কি নাই। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। আশঙ্কার কোনো কিছু নেই।
আপনার মতামত লিখুন :