“আমরা নিজেরাই খাল পরিষ্কার করবো, খালগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদেরই দায়িত্ব”বলে ঘোষণা দেন খাল পরিষ্কার কর্মসূচির প্রধান অতিথি হযরত আয়েশা (রা) একাডেমির চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নীহা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার কল্যাণপুর খালে (আদাবর, রোডনং-১০, খালপাড়) রেড অরেঞ্জ কমিউনিকেশন আয়োজিত খাল পরিচ্ছন্নতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তার এই বার্তা রাজধানীর জলাশয়ে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগের দৃঢ় সংকল্পকেই তুলে ধরে; একাজে শিক্ষক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) তাদেরকে সমর্থন জুগিয়েছেন।
উদ্যোগের সূচনা হয় একটি স্থানীয় মসজিদের খুতবা (ধর্মীয়বক্তৃতা) থেকে, যেখানে আদাবর, মোহাম্মদপুরে অবস্থিত হযরত আয়েশা (রা) একাডেমির শিক্ষকরা প্রথমে “খাল বাঁচলে, বাঁচবে নগর” প্রচারণা সম্পকের্ জানতে পারেন। কল্যাণপুরের নবদিগন্ত আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ‘প্লিজপ্রকল্প’-এর অধীনে অনুষ্ঠিত অনুরূপ অনুষ্ঠান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এই উদ্যোগতাদের নিজেদের স্কুলে নিয়ে আসেন।
গত ১৩ফেব্রুয়ারি রেড অরেঞ্জ এর একটি দল হযরত আয়েশা (রা) একাডেমিতে একটি প্রচারণা চালু করে, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা, তথ্যপত্র বিতরণ এবং সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।
রেড অরেঞ্জ-এর পক্ষ থেকে, খাল পরিষ্কার কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবারকে সম্পৃক্ত করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
তাদের উদ্দেশ্য বলা হয়, “তোমাদের বাবা-মা কীভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করেন জিজ্ঞাসা করো; ‘এই আবর্জনা গুলো কোথায় যায়?” শিক্ষার্থীরা সচেতনতার উদ্দেশ্য এই বার্তা গ্রহণ করে এবং বাড়িতে প্লিজ প্রকল্পের উপকরণ শেয়ার করে এবং প্লাস্টিকের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়ে আলোচনা শুরু করে।
শিক্ষকরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “এটি খুবই চমৎকার। আমাদের ছাত্রদের এ ধরনের কার্যক্রমে আরও অংশগ্রহণ করা উচিত।”
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে হযরত আয়েশা (রা.) একাডেমির শিক্ষার্থীরা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেয়, আর শিক্ষকরা ছিলেন বিশেষ অতিথি, যা শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের গুরুত্ব কে তুলে ধরেন।
দূষিত জলাশয় পরিষ্কারের সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, “আসুন পরিষ্কার করি এবং সবাইকে দেখাই কী ভাবে এটি করা যায়।”
ডিএনসিসি এর প্রতিনিধিরা তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, “আমরা গর্বিত, তোমরা নিজেরাই পদক্ষেপ নিয়েছ। খাল বাঁচানো মানে শহর বাঁচানো কিন্তু এটি শুধু আমাদের একার কাজ নয়। তোমাদের বাবা-মাকে বলো; সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে; যার যার ভূমিকা পালন করতে হবে”।
শিক্ষকরা ও গর্ব করে বলেন, “আমাদের শিশুরা দায়িত্বশীল এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে। এই ধরণের ছোটছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। এটি চালিয়ে যেতে হবে”।
এই প্রচারণার প্রভাব আর ও সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে ধারাবাহিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের হোম ওয়ার্ক, ছবি এবং প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ প্রদর্শনী, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনলাইন টক শো এবং আরও অনেক কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ। নানা অংশীজন এবং মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হবে এই কার্যক্রমে অংশ নিতে এবং দেখতে যে কীভাবে ছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তনের সূচনা করছে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া চতুর্থ শ্রেণীর সাকিব আল হাসান বলেন, আমরা বাড়িতে আমার ব্যবহৃত চিপস বা বোতলজাত কোন খাবারের খোসা যেকোনে সেখানে ফেলবো না। কারণ, আমাদের পারিবেশ এবং খাল দূষনের জন্য এটি খুবই খারাপ । আমরা আমাদের বাবা-মাকে এমন কাজ যেন না করেন তার জন্য বলবো।
রেড অরেঞ্জ কমিউনিকেশন ডেপুটি ডিরেক্টর, অপারেশন সামিউল ইসলাম বলেন, আমরা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি সেটি মূলত জনসচেতনামুলক একটি কাজ। কারণ আমরা বিশ্বাস করি সচেতনতা না সৃষ্টি করা গেলে খাল বাচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে খাল বাঁচলে বাঁচবে রাজধানী।