ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

ঢাবিতে ছাত্রী হেনস্থা, অভিযুক্তকে ছাড়াতে থানায় রাতভর ‘হট্টগোল’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু তাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হট্টগোলের অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ আদালতে হাজির করানো হলে জামিন পেয়েছেন অভিযুক্ত ব্যাক্তি।

জানা গেছে, বুধবার দুপুরে হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ব্যাক্তির নাম মোস্তফা আসিফ,তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার। পরে অভিযুক্তের ছবি যুক্ত করে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপে হেনস্তার ব্যাপারে পোস্ট করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

তিনি লেখেন, ‘এই লোকটা আজ আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই ইত্যাদি। তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোন হলে থাকেন, কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। বলেন, তিনি এই ক্যাম্পাসের কেউ না।’  

ওই পোস্ট করার পরে তার সহপাঠীরা অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফকে খুঁজে বের করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান এবং অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর ভুক্তভোগীর মামলার প্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিস থেকে তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়।

 

এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ তখন বলেন, ‘ছাত্রীকে হেনস্তার করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। পরে তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগারকে এ বিষয়ে জানানো হয়।’

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্তকে থানায় গ্রেপ্তারের পাশাপাশি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে গুজব ছড়িয়ে তার পক্ষে অবস্থান নেয় একটি গোষ্ঠী। ফেসবুকে আহ্বান জানিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে তারা শাহবাগ থানায় গিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে আনতে ‘মব’ তৈরির চেষ্টা করেন।

তাছাড়া ভুক্তভোগী মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্যও জোরাজুরি করতে থাকেন তারা। এমনকি ভুক্তভোগী ছাত্রীর মামলার নথি থেকে তার পরিচয় বের করে তাকে মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ বার্তা পাঠিয়ে সেগুলো ফেসবুকে উন্মুক্ত করে দেন। এভাবেই চলে রাতভর।

 

পরে বৃহস্পতিবার সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম, ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্যসংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, অভিযুক্তের বাবাসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে মীমাংসায় আসতে সক্ষম হন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্মত হন তার বাবা।

দুপুরে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা আলোচনা করে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে সম্মত করতে পেরেছেন।’

এদিকে আটক মোস্তফা আসিফকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. তৌফিক হাসান। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে জামিনের পর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয় দেওয়া গোষ্ঠীটি।