ঢাকা রবিবার, ০৯ মার্চ, ২০২৫

মাগুরার শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন, মেডিকেল বোর্ড গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুটির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি ডিপার্টমেন্ট মিলে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

শনিবার দুপুরে শিশুটির শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‌‘শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন।  তার গলার আঘাত খুবই মারাত্মক।  তার যৌনাঙ্গেও আঘাত রয়েছে।  শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।  চিকিৎসকরা আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন।  বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে শিশুটির শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি এখনো।  দুই দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে তাকে।  শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।  বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে শিশুটি অচেতন অবস্থায় রয়েছে।

শনিবার সকালে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভুক্তভোগীর একজন স্বজন জানান, শিশুটি এখনো অচেতন।  তার জ্ঞান ফেরেনি।  চিকিৎসকেরা বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।  আট বছরের ছোট্ট এই শিশুটি বুধবার গভীর রাতে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসা চলছে আট বছরের শিশুর।  কথা বলছে না, নড়াচড়াও নেই।  অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সে।  মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।  ধর্ষণের শিকার এই শিশুটি।  আর তার পাশে বসে কাঁদছেন মা।  সন্তানের এ অবস্থায় তিনি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ।  এক হাত দিয়ে মেয়ের মাথা স্পর্শ করছেন, আরেক হাতে নিজের চোখের পানি মুছছেন।  মেয়ের করুণ অবস্থা দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।  

প্রধান অভিযুক্ত বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪৭) ও স্বামী সজিব শেখকে (১৮) আটক করেছে পুলিশ।  এদিকে শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মাগুরার সাধারণ মানুষ।  অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার দুপুরে শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়।  পরে তারা মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করে।

স্বজন জানান, শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।  এই হাসপাতালেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।  ফলে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি ইউনিটের একজন চিকিৎসক বলেন, শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি।  তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।  চিকিৎসা চলছে।

মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে আট বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহজনকভাবে শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব শেখ ও তার বাবা হিটু শেখকে আটক করা হয়েছে।  এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।  ফলে মামলা হয়নি।

শিশুটির স্বজন জানান, তার বাবা ভ্যানচালক।  তাদের বাড়ি মাগুরায়।  মাস চারেক আগে শিশুর বড় বোনের বিয়ে হয় মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের ছেলে সজিব শেখের সঙ্গে।  সজিবও রাজমিস্ত্রি।  কিছুদিন আগে শিশুটির বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়।  সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

শুক্রবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডে (পিআইসিইউ) শিশুটির পাশে বসেছিলেন তার মা।  কাঁদতে কাঁদতে ওয়ার্ডের গেটের সামনে অবস্থান করা স্বজনদের কাছে আসেন।  তখনো কাঁদছিলেন।  কাঁদতে কাঁদতে এক স্বজনকে ধরে বলেন, আমার মেয়ে কথা বলছে না।  ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না।  মেয়ের কী হবে? ওদের ফাঁসি চাই।

তিনি বলেন, তার বড় মেয়ে তাকে জানান, শ্বশুরবাড়িতে রাতে তার ভয় লাগে।  এ জন্য ছোট বোনকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে চায়।  তার আবদারের মুখে শনিবার ছোট মেয়েকে বড় মেয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেন।  কিছুদিন থাকার পর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।  বুধবার রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়।  পরে গলায় কিছু পেঁচিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।