বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

banner

সর্বত্র কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

সর্বত্র কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিশোর গ্যাংয়ের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ সমাজের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সমাজে স্থিতিশীলতা ও শান্তি নষ্ট করছে।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, নগরে কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসবের কারণে শুধু আতঙ্ক নয়, লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া সরকার ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানেন এদের নেতৃত্বে থাকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল। যে কারণে সমাজ থেকে ইচ্ছা করলেও কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সমাজ বিশ্লেষকদের দাবি, গত ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া হয়ে উঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আরও ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। তারা অনেক সময় ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করছে।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন থেকে সতর্ক না হলে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ কিশোর গ্যাং এখন দেশের অপরাধের গলার কাঁটা। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। অতীতে বারবার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক বাধা এসেছে। এবারও সেই একই বাধা মোকাবিলা করছেন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
 
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সাধারণত ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি মিরপুর, উত্তরা এবং মোহম্মদপুরের মতো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অপরাধীরা প্রকাশ্যেই সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিশোর গ্যাংয়ের এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ক্রমশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া, মোহাম্মদপুর এলাকায়ও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোররা এখানে চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা এবং সহিংসতা চালাচ্ছে। এটি শুধু এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে না, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এবং জনমনে বিভ্রান্তি: কিশোর গ্যাংয়ের এই কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধী কিশোরদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতেও অপরাধীরা নির্দ্বিধায় তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

সচেতন মহল মনে করেন, মিরপুর, উত্তরা এবং মোহাম্মদপুরের মতো এলাকাগুলোয় কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। এক্ষেত্রে জনগণ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে পারে। যেমনটি উত্তরা হামলার ঘটনায় দেখা গেছে, এলাকার বাসিন্দারা অপরাধী কিশোরদের ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল। এটি অবশ্যই বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।

কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ উল্লেখ করে সচেতন মহলের দাবিÑ কিশোর গ্যাংয়ের এই উত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পারিবারিক অবহেলা অন্যতম একটি বড় কারণ।  দ্বিতীয়ত, সঠিক বিনোদনমূলক ও সৃজনশীল কার্যক্রমের অভাব কিশোরদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। তৃতীয়ত, সামাজিক অস্থিরতা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। তারা সমাজে ক্ষমতা, অর্থ এবং সম্মান পাওয়ার জন্য ভুল পথ বেছে নিচ্ছে। অনেক কিশোর এসব মিডিয়ায় অপরাধী গ্যাং সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তাদের অনুসরণ করছে।

কিশোর গ্যাং বন্ধে প্রয়োজন একাধিক কার্যকর পদক্ষেপ:  প্রথমত, তাদের রাজনৈতিক ফায়দা থেকে দূরে রাখা এবং কিশোরদের জন্য বিকল্প কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। সরকারের উচিত কিশোরদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সৃজনশীল কার্যক্রমের আয়োজন করা, যাতে তারা অপরাধের দিকে না ঝুঁকে। দ্বিতীয়ত, সামাজিকভাবে সবাইকে সতর্ক ও সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকরী হতে হবে। পুলিশকে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করতে হবে এবং অপরাধী গ্যাংগুলোর কার্যকলাপের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, পরিবার এবং সমাজের দায়িত্বও বাড়াতে হবে। তা ছাড়া বাবা-মা এবং অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি আরও নজরদারি এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, যাতে তারা অপরাধের পথে না চলে।

কিশোর গ্যাং সারা দেশেই তাণ্ডব চালাচ্ছে: কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করা একটি বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য মতে, সময় বদলালেও বদলায়নি ক্রমে আতঙ্ক হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাং সদস্যরা।  ৫ আগস্টের পর কেউ দল বদলেছে, কেউ বদলেছে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। কেউ আবার পুরোনোকে সরিয়ে আবির্ভূত হয়েছে নতুন রূপে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তথ্য বলছে, সম্প্রতি এই গ্যাংয়ের সদস্য আরও বেড়েছে। সারা দেশেই তাণ্ডব চালাচ্ছে তারা।

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আবারও ঢাকাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত অনেক গুণে বেড়েছে। এতে এলাকাজুড়ে বেড়েছে দখল, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ও মারামারির মতো জঘন্য ঘটনা। আর এসবের পেছনে রয়েছে কিশোর অপরাধীরা। সূত্র জানায়, এলাকাভিত্তিক কথিত রাজনৈতিক নেতারা তাদের ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা নিচ্ছে। কথিত নেতাদের শেল্টারে বেপরোয়া এ কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নাজেহাল হচ্ছে এলাকার ব্যবসায়ী সমাজ ও সাধারণ জনগণ।  

উত্তরা, মোহাম্মাদপুর ও মিরপুরে ভায়াবহ রূপ: এদিকে উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর ও নতুন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দ্বিগুণ।  এসব এলাকায় বেড়েছে দখল, চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাই ও মারামারির মতো জঘন্য ঘটনা। দিনেদুপুরে বাসাবাড়িতে চুরি, ছিনতাই ছাড়াও এ চক্রটি প্রায়ই তুরাগ নয়ানগর, দলিপাড়া, বাউনিয়া, কামারপাড়া, দক্ষিণখান, ট্রান্সমিটার, মোল্লাবাড়ী, হলান, আজমপুর, আশকোনা, কাওলা, খিলক্ষেত নিকুঞ্জ, উত্তরখান মাদার বাড়ি, মাজারপাড়া, বড়বাগ, চাঁনপাড়া, তেরমুখ, উত্তরখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মূল্যবান বৈদ্যুতিক তার রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে যায়।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানামুখী অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। নিজেদের হিরোইজম জাহির করতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবার এমনকি খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে এসব কিশোর-তরুণ। অতীতের মতো এখনো রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা।

সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা জসিমউদ্দিন এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়েছে পথচারী নজরুল। ছিনতাই করতে বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। 
আব্দুল্লাহপুর এলাকায় মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা গার্মেন্টস শ্রমিক কণা নামের এক নারীর কানের দুল ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।  

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। আগের চেয়ে তাদের দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজারের বেশি।  তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্রও রয়েছে।

উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেন, আমরা এ পর্যন্ত শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র মতে, শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের সদস্য আরও বেড়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা গ্রামীণ জনপদেও ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা অনুযায়ী অভিযান চালাতে সারা দেশের পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

আরবি/জেডি

Link copied!