দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার টানা চারদিনের ছুটিতে সারাদেশ। আর এই ছুটি কেন্দ্র করে ঘরেফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে রাজধানীর বাসস্টপেজ ও রেলস্টেশনগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কগুলোতে তুলনামূলক বেড়েছে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ। যার ফলে ভোর থেকেই সাইদাবাদ-যাত্রাবাড়িসহ নারায়ণগঞ্জ অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আর সেই দুর্ভোগ হাজারগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ি রুটের খানাখন্দে ভরা সড়ক। টানা বৃষ্টি ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ার ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তির অন্ত নেই। পাশাপাশি বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। টিকেট কেটেও সিট না পাবার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। আর বাস মালিক সমিতির উদাসীনতা সেই আগের মতোই।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেহাল দশা রয়েছে। রাস্তা ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ফলে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। গত দুদিনের বৃষ্টিতে সড়কের খানাখন্দে পানি জমেছে। কাদাপানিতে এখন একাকার সড়কটি। এতে ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চলাচল করছে যানবাহন।
সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ি রুটের সড়কগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাগুলোতে ছোট-বড় গর্তে ভরা। বাস, সিএনজি থেকে অটো রিকশা গর্ত ডিঙিয়ে চলার চেষ্টা চলছে, যা প্রায় অসাধ্য। ৫ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা। সেই সঙ্গে গর্ত ভরা রাস্তায় চলার পথে একটু অসাবধান হলেই- পিকআপ ভ্যান, রিকশা উল্টে বন্ধ হয়ে যায় ব্যস্ত এই সড়কটি।
আব্দুল হান্নান নামের যশোরগামী একজন যাত্রী রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, মতিঝিল থেকে বাসে উাঠছি বেলা ১১ টায়। এখন ৩টা বাজে সায়দাবাদে আটকে আছি। নেমে হাটা দেব সুযোগ নেয়, বউ-বাচ্চা রয়েছে, ব্যাগ রয়েছে। রিকশা সিএনজিও করে এই রাস্তায় যাওয়া যাচ্ছে না। যে কাদা, মনে হচ্ছে গ্রামের পুকুরের মাঝে বাসে চড়ে আছি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল নতুন সরকার নতুনভাবে জনসাধারণের দুঃখ ঘোচাতে কাজ করবে। তবে তাদের কচ্ছপ গতি দেখে মনে হয়, এসকল সড়ক মেরামত শুরু হতেও কয়েকবছর লাগবে। তবুও ড.ইউনূস স্যারকে বলবো, জনগণের দুঃখ লাঘবে এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিনে নয়, মাঝরাতেই মেরামত করবেন।
সড়কের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে যাত্রাবাড়ী বাস স্টেশনের (হানিফ কাউন্টারের পাশে) ফল বিক্রেতা জামাল শেখ বলেন, কয়েক মাস ধরেই দেখছি এই রাস্তা ভাঙা। যা যানজটের অন্যতম কারণ। একইসাথে বৃষ্টির পানি তো নামে না। দোকানের সামনে রাস্তায় হাটু পানি। বেচাকেনা হয় না, মানুষ চলতে পারে না।
শুধু তাই নয়, একদিকে যত্রতত্রভাবে গণপরিবহনে যাত্রী ওঠানামা, অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি পার্কিংও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন পথচারীরা।
তবে এই সড়কে যানজটের আরও অন্যতম একটি কারণ ধরা পড়েছে রুপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে। সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে যশোর, নড়াইল, খুলনা, মগুরা, বরিশালসহ এই রুটের বাসগুলো পোস্তা ব্রিজের পর পর্যন্ত ৫০ থেকে ১০০ মিটার পরপর দাড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার জন্য গাড়ি থামায়। আর একদল যাত্রী নিয়ে অপেক্ষা করেন। তারা কমিশনের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যাক যাত্রী উঠাতে থাকে। সেই সঙ্গে এখানে অন্তত দুটি গ্রুপকে সরাসরি চাঁদা নিতে দেখা গেছে।
চাঁদার বিষয়ে পরিচয় গোপন রেখে মনু নামের একজনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘টেকা তো আগের জাগায় যায় স্যার। আমরা কামলা, এ টেকা ছাড়া এ রোডে গাড়ি চালবার কোন পুত নেই।’
রাস্তায় যানজটের কারণ জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশের ডিউটি অফিসার বলেন, সড়কে অতিরিক্ত যানজট নিরসনে কাজ করছি। তবে ছুটির কারণে সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। গণপরিবহনের সাথে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও।
তিনি বলেন, এই রাস্তায় অনেক খানাখন্দ এবং পিচ উঠে গর্ত সৃষ্টি হওয়া, গাড়ির গতি অত্যধিক কমে যাওয়ার একটি বিশেষ কারণ হিসেবে কাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :