জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বহুরূপ ধারণ করে ইচ্ছামতো নিজের একাধিক পাসপোর্ট বানানো কর্মকর্তা মাসুম হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর তুরাগ থানা পুলিশ। মাসুম উত্তরার ই-পাসপোর্ট পার্সোনাইলেজশন কমপ্লেক্স শাখার উপ-পরিচালক পদে কর্মরত।
পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মাসুম হাসানকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তর থেকে মামলাও করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের আলোচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রতিবেদন করা হয়। মূলত এ প্রতিবেদনের পর পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তর থেকেই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ কাশিয়ানী থানার শঙ্করপাশা গ্রামের এম এম হাসানের ছেলে মাসুম হাসান। তিনি ২০০৭ সালের ৮ জুলাই যোগ দেন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম পোস্টিং হয় হবিগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে।
দুই বছর পর বদলি হয়ে আসেন সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অ্যান্ড ভিসা অফিসে। পরে ২০১২ সালে আবার বদলি হন যশোরে। সেখান থেকে উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতিসহ পোস্টিং পান ময়মনসিংহ কার্যালয়ে। সেখান থেকে রংপুর, পরে আবার ময়মনসিংহ জেলা অফিস।
২০১৫ সালে চলে আসেন ঢাকা বিভাগীয় অফিসে। ২০১৮ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাসপোর্ট অফিসে। ২০১৯ সালে যান ফরিদপুর আঞ্চলিক অফিসে, সেখান থেকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মাসুম হাসান ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এনওসির ভিত্তিতে প্রথম অফিসিয়াল পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর ওসি৪০০৬৪৪০। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট সরকারি চাকরির পরিবর্তে পেশা ‘আদার্স (অন্যান্য)’ উল্লেখ করে এনওসির ভিত্তিতে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর বিএল০৭১২৩১৮।
২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সাধারণ পাসপোর্টের পরিবর্তে পেশা সরকারি চাকরি উল্লেখ করে আবারও ‘জিও’র ভিত্তিতে একটি অফিসিয়াল পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর ওসি২২৬২৬১৫। এই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত।
এ সময় তিনি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ফরিদপুরে কর্মরত ছিলেন। এই পাসপোর্ট করার সময় মাসুম হাসান নিজের আবেদন নিজেই গ্রহণ করেন এবং নিজের পাসপোর্টে নিজেই সই করেন।
তিনি সর্বশেষ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চাঁদগাঁওয়ে দায়িত্বরত থেকে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরি উল্লেখ করে এনওসির ভিত্তিতে নিজেই নিজের সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও অনুমোদন করে একটি সাধারণ ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, যার নম্বর ‘এ০৪৫৯৭৯৩৩’।
সরকারি কর্মচারীদের অফিসিয়াল পাসপোর্টের পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্বানুমতি গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা অনুসরণ করেননি। বরং তিনি অসদুপায়ে একাধিক পাসপোর্ট নিয়েছেন। একজন পাসপোর্ট কর্মকর্তার এমন কীর্তি ফাঁস হওয়ায় খোদ পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
আপনার মতামত লিখুন :