ঢাকা: মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানার পদত্যাগের দাবিতে ষড়যন্ত্র করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল । এই য়ড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ (১৭ আগস্ট) শনিবার মানববন্ধন করেন । মানববন্ধন থেকে তারা অভিযোগ করেন, মিরপুর গার্লস আইডিয়ালের শিক্ষিকা জান্নাতুল নাঈম মিলি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে নিজের ভাই পরিচয় দিয়ে প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের করছে।
সরেজমিনে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ মানববন্ধন করছেন। তারা অভিযোগ করেন, বিপাশা ইয়াসমিন, খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত জান্নাতুল নাঈম মিলি, আফরোজা আক্তার বেবী, আব্দুল হান্নান এবং বহিষ্কৃত শিক্ষক শাহীন বিশ্বাস মিরাজসহ স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে শিক্ষার্থীদের নানা ভয়-ভীতি দেখানোসহ মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানার পদত্যাগ দাবি করছেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষকরা জানান, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট বৃহত্তর মিরপুরের একমাত্র নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা অত্যন্ত সুনাম ও সফলতার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি ১৯৯৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম যোগদান করেন, পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০১৩ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছেন যা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক এবং অত্র এলাকাবাসী একবাক্যে স্বীকার করেন।
তারা বলেন, হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে এবং অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার কর্তৃত্ব কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে একটি কুচক্রীমহল প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে সরিয়ে দিতে চায় এবং নিজেরা সেখানে আধিপত্য বিস্তার করার অপচেষ্টা় চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং প্রভাতী ও দিবা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ অন্যান্য দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে বিভিন্ন মিডিয়াকে ব্যবহার করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র সফল করার চেষ্টা করছে। এখানে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪-৫ জন বিপৎগামী, চাকরিচ্যুত শিক্ষক যারা এমপিওভুক্ত নন এবং এডহক কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত, তারা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করে মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জঘন্য মিথ্যাচার ও বানোয়াট অভিযোগ প্রচার করছে। এই প্রতিষ্ঠানের ১১০ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে এই ৪-৫ জন অযোগ্য ও অদক্ষ শিক্ষক যারা বিগত ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের প্রভাব ব্যবহার করে এতদিন ‘এমপির লোক’ হিসেবে পরিচয় দিত, তারাই পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভোল পাল্টিয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বানোয়াট অভিযোগ প্রচার করছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার বাইরে বিগত ক্ষমতাশীল দলের এমপির সরাসরি হস্তক্ষেপে সংগীত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় বিপাশা ইয়াসমিন এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় জান্নাতুল নাঈম মিলি। এ ছাড়াও আফরোজা আক্তার বেবী, আব্দুল হান্নান এবং বহিষ্কৃত শিক্ষক শাহীন বিশ্বাস মিরাজ, যারা অদক্ষ এবং অযোগ্য হিসেবে বার বার প্রমাণিত হয়েছে, তারাই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি লিপ্ত।
তারা বলেন, সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল নাঈম মিলির ভাই পরিচয়ে জনৈক এক/একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষকদের ফোন করে হুমকি, গালাগাল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এমন ভয়ভীতি প্রদর্শনের একটি ফোন রেকর্ড রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।
শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন থেকে তারা অভিযোগ করেন, মিরপুর গার্লস আইডিয়ালের শিক্ষিকা বিপাশা ইয়াসমিন স্কুলে এসেও টিকটক করেন। একই সঙ্গে তাদের টিকটকে উৎসাহ প্রদান করেন। শিক্ষিকা বিপাশার ব্যবহারগত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ তোলেন তারা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কিছু শিক্ষার্থী জানান, তারা প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানার পদত্যাগ, একইসঙ্গে তার প্রধান শিক্ষকের পদ বহালের দাবিতে রাস্তায় নামলে মিলি ম্যাম, বিপাশা ম্যাম, বেবি ম্যাম এবং আফরোজা ম্যাম আমাদের গালাগালসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তারপরও তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে চান বলে জানান।
অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষিকা মিলি, বিপাশা, বেবি এবং আফরোজা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তারা আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার নাম ব্যবহার করে জোরপূর্বক নানা সুবিধা ভোগ করেছেন। একইসাথে তাদের নামে নানা আর্থিক কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :