ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে

উত্তরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম

উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর ও নতুন ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লায়  কিশোর গ্যাং এর উৎপাত বেড়েছে বলে জানা যায়। এর ফলে এলাকাজুড়ে বেড়েছে দখল, চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাই ও মারামারির মতো জঘন্য  ঘটনা। 

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এলাকার কথিত রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা নিচ্ছে। কথিত নেতাদের শেল্টারে বেপরোয়া এ কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নাজেহাল হচ্ছে এলাকার ব্যবসায়ী সমাজ ও সাধারণ মানুষ।

দিনে দুপুরে বাসাবাড়িতে চুরি, ছিনতাই ছাড়াও এ চক্রটি প্রায়ই  তুরাগ নয়ানগর, দলিপাড়া, বাউনিয়া, কামারপাড়া, দক্ষিণখান, ট্রান্সমিটার, মোল্লাবাড়ী, হলান, আজমপুর, আসকোনা, কাওলা, খিলখেত নিকুঞ্জ, উত্তরখান মাদার বাড়ি, মাজারপাড়া,বড়বাগ, চাঁনপাড়া, তেরমুখ, উত্তরখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাড়া মহল্লার বাসাবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের মূল্যবান বৈদ্যুতিক তার রাতের আধারে কেঁটে নিয়ে যায়। 

জানা যায়, কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িত রয়েছে এলাকার বখাটে যুবক, ছিঁচকে চোর, ছিনতাইকারী ও বিপদগামী কিছু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী।সরেজমিনে দেখা যায়,  কখনো কখনো নির্মাণাধীন ভবনের মূল্যবান রড, সিমেন্ট চুরির ঘটনায় এলাকাবাসী চোরকে ধরে থানা পুলিশকে জানালেও চোরের বয়স কম হওয়ার কারণে থানা পুলিশ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। 

 জানা যায়, গত ১৯ শে আগস্ট রাত ১১ টায় কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি আহত হয়। উত্তরায় ৩ নং সেক্টর আরং-এর পিছনের সড়কে জসিমউদদীন প্যারাডাইজ টাওয়ারের পিছনে ঐ ঘটনায় জের ধরে তার উপর সন্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী  গত ১৯/৮/২০২৪ ইং তারিখ উত্তরা পশ্চিম থানায় ১/ সানি (৩২) পিতা. আবদুল কুদ্দুস  সাং -বাউনিয়া থানা. তুরাগ  ২/ মামুন (৩২) পিতা. আব্দুল শহিদ  সাং-নয়ানগর থানা. তুরাগ এই দুই জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছে। 

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ১৯আগস্ট সোমবার ভোর ৫ টার সময় উত্তরা ৩ নং সেক্টর ২ নং রোড জসিম উদদীন প্যারাডাইজ ভবনের সামনে দিয়ে তিনি তার নিজস্ব প্রাইভেটকার চলিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় সানি ও মামুন তার গাড়ি আটকায়। এসময় তারা তার গাড়ির সামনে থাপ্পড় মারতে থাকে। উক্ত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথার কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সন্ত্রসী সানি তার সুইচ গিয়ার চাক্কু দিয়ে ভুক্তভোগীর ডানহাতে পোঁচ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। অপরদিকে সন্ত্রসী মামুন তার সাথে থাকা আজিজুলকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তার শরীরে নিলা ফুলা জখম করে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।

 অভিযোগ সুত্রে আরো জানা যায়, সন্ত্রসীদের চাক্কুর আঘাতে আহত ঐ ভুক্তভোগী এসময় ডাক চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদেরকে  আবাও মারবে বলে হুমকি দিয়ে  চলে যায়। গুরুতর আহত রক্তাক্ত ঐ ভুক্তভোগীকে সন্ত্রসীদের হামলা থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে তিনি পুলিশ কেইস সার্টিফিকেট নিয়ে এসে উত্তরা পশ্চিম থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মনজুরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি তিনি তদন্ত করছেন, তবে সানি ও মামুনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্ত শেষে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আলাপ করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। 

কিশোর গ্যাং বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই এলাকায় নতুন জয়েন্ট করেছি। অপরাধী যেই হউক না কেন ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিবো ইনশাআল্লাহ। 

একাধিক সুত্রে জানা যায়, উত্তরা প্যারাডাইজ ভবনের ঐ কর্মকর্তার উপর হামলাকারীরা কিশোর গ্যাং সদস্য। 

এসময় স্থানীয় পথচারীরা জানান, এই গ্রুপের সদস্যদের জ্বালায় রাতের বেলায় বউ বাচ্চা নিয়ে উত্তরার রাস্তায় চলাচল করতে পারি না । তারা এতোটাই ভয়ংকর যে সামান্য বিষয়ে  গায়ে পরে মানুষকে রাস্তায় অপমান, নাজেহাল ছাড়াও খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। রাত হলে তারা  উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের অলিগলি, বড় বড় শপিং কমপ্লেক্সের সামনে, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, তুরাগ, আব্দুল্লাহপুর চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী ব্রীজের কোনায়, উত্তরা বিভিন্ন মদের বার ও সুইজ গেইট এলাকায়  অবস্থান নেয়। সংঘবদ্ধ এ চক্রটি  সুযোগ বুঝে ছোঁ মেরে পথচারীদের  মোবাইল, মানিব্যাগ ও মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। 

জানা যায়, বর্তমানে  কিশোর গ্যাংয়ের লাগামহীন চাঁদাবাজিতে নাজেহাল উত্তরার ব্যবসায়ীরা। 

এবিষয়ে আরো জানা যায়, গত ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ  সরকারের পতনের পর কয়েক দিন পালিয়ে থেকে আবারও সানি এবং মামুন ৮ই আগষ্ট থেকে কমপক্ষে ১০/১২ টি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে টাকা পয়সাসহ মূল্যবান জিনিস পত্র  লুটপাট করে।  তার মধ্যে উত্তরা কমফোর্ট ইন হোটেল, কিং ফিশার বার, বেইজিং হোটেল, মারগারিটা লাউন্জ, কুরিয়ান রেস্টুরেন্ট, ডি ম্যরিডিয়ান হোটেল ও অন্যান ছোটবড় অনেক প্রতিষ্ঠান।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারা  ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা  হাবিব হাসান এবং তার ভাই আলাউদ্দিন সোহেলের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক চাঁদা উঠানোর দায়িত্বে ছিল সানি এবং মামুন। 

অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, সে সময়ে উত্তরা পশ্চিম থানার কয়েকজন দূর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের সেল্টারে কিশোর গ্যাং সদস্যরা এসব অপকর্ম করেছে। কিশোর গ্যাং সানির বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় কয়েক ডজন  অভিযোগ এবং এক ডজন মামলা রয়েছে। 

ভুক্তভুগীরা জানায়, সানিকে অধিকাংশ সময় উত্তরা পশ্চিম থানার আশপাশে দেখা গেলেও অদৃশ্য কারণে থানা পুলিশ তাকে আটক করছে না। ইতিপূর্বে সানি ও মামুন  উত্তরার  আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়ে বিভিন্ন সন্রাসী  কাজ কর্মে জড়িত থেকে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও  বর্তমানে  তারা নতুন রাজনৈতিক দলের সাথে আঁতাত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

এবিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জনস্বার্থে তারা কিশোর গ্যাং সদস্যসহ  কোন  অপরাধীকে  ছাড় দিবেন না।

আরবি/জেডআর

Link copied!