বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সেলিম রেজা, নকলা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫, ১২:০৬ পিএম

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প, ভালো নেই কারিগররা

মো. সেলিম রেজা, নকলা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫, ১২:০৬ পিএম

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প, ভালো নেই কারিগররা

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাঙালি জাতির পুরনো ঐতিহ্য সমূহের মধ্যে মাটির তৈজসপত্র বা মৃৎশিল্প অন্যতম। কিস্তু প্লাস্টিক, স্টীল, কাঁচ ও সিরামিক পণ্যের সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্যতার প্রভাবে পুরনো এই ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে পূর্ব পুরুষের মৃৎশিল্পের এ পেশাকে এখনও ধরে রেখেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের বিহাড়িরপাড় এলাকার পাল সম্প্রদায়ের অর্ধশত পরিবারের লোকজন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দারিদ্র্যতা যেন পাল সম্প্রদায়ের পরিবারে নিত্যদিনের সঙ্গী। তাদের ঘরে প্রায়ই অভাব অনটন লেগে থাকে।

শীত মৌসুমের বাণিজ্যমেলা এবং শুষ্ক মৌসুম জানান দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠান। আর সেইসব উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ত সম পার করছেন পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। শুরু করছেন মাটির খেলনাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির কাজ। এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্য সময়ে কম থাকলেও, বাণিজ্যমেলা ও পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন মেলাতে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছাড়া যেন জমেই না। তবে প্লাস্টিক, স্টিল, কাঁচ ও সিরামিকের তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাহারী পণ্যের দাপটে হাতের তৈরি মাটির পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তাই মৃৎশিল্পীরা আগের মতো সারা বছর চরকা ঘুরিয়ে মাটির পণ্য তৈরি করেন না।

ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে মাটির তৈরি পণ্য বেশি বিক্রি হয়। এ সময় তারা মাটির গাছ, পশু-পাখি, ফুল-ফল, ফুলের টপ ও ফলমূলসহ বিভিন্ন বাসন-কোসন বানিয়ে থাকেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে বিভিন্ন মাটির তৈরি খেলনার আকৃতি দিয়ে এবং নানান রং দিয়ে খেলনা সাজিয়ে তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মৃৎশিল্পী দীপ্ত রানী পাল, সূচনা পাল, নির্মল পাল, হাসা রানী পাল, মন চন্দ্র পাল, সুনীল পাল, পুস্প রানী পাল, গৌতম চন্দ্র পাল, কাজল রানী পাল, বিপুল চন্দ্র পাল, সুলতা রানী পাল, দ্বিলীপ চন্দ্র পাল, মিলন রানী পাল, গদা রানী পালসহ শিক্ষার্থী বিথী রানী পাল, অর্পিতা রানী পাল ও অংকনা রানী পাল মাটির পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরমধ্যে সুনীল পালের ছেলে প্রদীপ পাল চরকা ঘুরিয়ে মাটির পণ্যের আকৃতি দিচ্ছেন। কেউ হাতে পণ্য বানাচ্ছেন, কেউ কেউ পণ্য তৈরি করার জন্য মাটি মিশাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা নতুন তৈরি করা ভিজা পণ্য রোদে শুকাতে দিচ্ছেন, কেউবা তুলি দিয়ে রং করাসহ পণ্যের গায়ে বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলছেন। আর ৭০ বছর বয়সি মৃৎশিল্পী শ্যামল চন্দ্র পাল ও খগেন চন্দ্র পাল সকলকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

আগে এই এলাকার প্রায় শত পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও, মাটির পণ্যের সার্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্যপেশায় চলে গেছেন। তবে সৌখিন লোকজনের ও শিশুদের চাহিদা মেটাতে অনেকেই বাপ দাদার এই পেশার ঐতিহ্যকে এখনো আকরে ধরে রেখেছেন।

মৃৎশিল্পীদের দেয়া তথ্যমতে, তাদের তৈরি মাটির প্রতিটি পণ্যের আকার-আকৃতি ও গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে পাইকারি প্রতি পিস ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে এবং খুচরা প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। চাহিদা কম থাকায় সারা বছর কম কম বানানো হয়। মাটি ক্রয় করা, মাটি পরিবহন করা, মাটি মিশানো, তৈরি পণ্যে রঙ করা, পুড়ানোসহ যে টাকা ব্যয় হয়। বিক্রি শেষে লাভ থাকে না বললেই চলে। তাই এখন শুধুমাত্র এই পেশার আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার খরচ চালানো সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়েই সবাই এই পেশার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় মনোনিবেশ করেছেন।

মৃৎশিল্পী শ্যামল চন্দ্র পাল জানান, এই শিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। তাই নিচু এলাকার কৃষকের ক্ষেত থেকে মাটি কিনে তা সংগ্রহ করে মজুদ করে রাখতে হয়। পরে পণ্য বানানোর জন্য প্রয়োজনমতো মাটি উপযোগী করা হয়। চাকার (চরকা) মাধ্যমে বা হাতে এসব উপযোগী মাটিকে গাছ, পশু-পাখি, ফুল-ফল, ফুলের টপ ও ফলমূলসহ বিভিন্ন বাসন-কোসনের আকৃতি দেয়া হয়। পরে মাটির জিনিসপত্রগুলো বিশেষ কৌশলে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। এরপরে এতে মনের মাধুরী মিশিয়ে রঙ দয়ার কাজ শেষ করে বিক্রি করা হয়।

অন্য এক মৃৎশিল্পী খগেন চন্দ্র পাল জানান, মাটির বাসন-কোসনের চাহিদা কমতে থাকলেও মাটির টপ ও খেলনা সামগ্রীর চাহিদা এখনো কমেনি। ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। এসব উৎসবের সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই এখন তাদের দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে।

শিক্ষিত নারী মৃৎশিল্পী অর্পিতা রানী পাল জানান, প্রতিটি পহেলা বৈশাখ ও বিভিন্ন মেলাসহ ঐতিহ্য অনুষ্ঠানে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বেশি বিক্রি হয়। মেলাকে সামনে রেখে আমরা দিনরাত পণ্য তৈরি করছি। তবে এখন এই পেশার আয়ে সংসার চলে না। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আর আগের মত দিনরাত চরকা ঘুরানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় না। ঐতিহ্যবাহী এই পেশাকে ধরে রাখতে সরকারি সহযোগিতার দাবি করছি।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই শিল্পের দিকে সরকার ও বিত্তবানদের সুনজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বলেন, ‘যে বা যারা এখনো এসব শৈল্পিক কাজ করেন, তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি সহজে বাজারজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি।’

সরকারিভাবে একাধিকবার নামের তালিকা নিলেও কোনো সহযোগিতা পায়নি বলেও এই এলাকার মৃৎশিল্পীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

আরবি/এসআর

Link copied!