সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

নিখোঁজের তিনদিন পর হাত পা বাধা অবস্থায় ছাত্রদল নেতা উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৯:০১ পিএম

নিখোঁজের তিনদিন পর হাত পা বাধা অবস্থায় ছাত্রদল নেতা উদ্ধার

ছাত্রদল নেতা মামুন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের ভালুকায় নিখোঁজের তিন দিন পর ছাত্রদল নেতা মামুনকে হাত বাধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে সে হবিগঞ্জের বাহুবল স্বাস্থ কমপ্লক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

মামুন নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি নিজ এলাকার কাপাসিয়া স্কুলে কারিগরি শাখায় ১০ম শ্রেণিতে পড়তেন। স্কুলজীবন থেকেই মামুন গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর সংকরপুর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা থেকে হাত পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার বাহুবল স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন এক বাস চালক।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির রূপালী বাংলাদেশ‍‍`কে বাহুবল স্বাস্থ কমপ্রেক্স থেকে উদ্ধার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে ছাত্রদল নেতা মামুনকে বলতে শুনা যায়, উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত নোমান কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে ডিউটি শেষে রবিবার রাত ১০টার দিকে বের হন। বের হওয়ার পর তিন চার জন তাকে জোড়পুর্বক ধরে হাইয়েজ গাড়িতে তুলে হাত পা বেধে ফেলেন। হা পা বাধার পর পিছন থেকে রুমাল বা গামছা দিয়ে মুখে ধরে তাকে অজ্ঞান করে ফেলে। এর দুই দিন জ্ঞান ফিরে।

তবে, দুই দিন তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল, তা বলতে পারেননি তিনি। জ্ঞান ফিরলে অপহরণকারীদের কথাবার্তা শুনতে পারেন মামুন। অপহরনকারীদের লিডার মামুনকে না মেরে কোথাও ফেলে দিতে বলেন। পরে তার নির্দেশনা অনুযায়ী গত বুধবার তাকে হবিগঞ্জোর বাহুবল উপজেলায় ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে হাত পা‍‍`য়ের বাধ খুলে এক বাস চালকসহ কযেকজন মামুনকে বাহুবল স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। মামুন বর্তমানে বাহুবল স্বাস্থ কমপ্লেক্সে পুলিশ পাহাড়ায় চিকিৎসাধীন আছেন। মামুনের হাত পা‍‍`য়ে রশি দিয়ে বাধার চিন্হ রয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত রবিবার মামুন নিখোঁজ হওয়ার পরদিন মামুনের তার বড় ভাই মো. ইসলাম উদ্দিন সোমবার রাতে ভালুকা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

সুত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে পুলিশি হয়রানীর কারণে ভালুকা এলাকায় রোমান কম্পোজিট মিলে চাকুরি নেন মামুন। ভালুকাতেও সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেন মামুন। ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় সমন্বয়ক হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশ যখন উত্তাল সেই দিন মামুন তার সহকর্মীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করতে রাস্তায় নেমে আসেন। মিছিলে এসে পরিচয় হয় তোফাজ্জলের সাথে।

৪ আগস্ট সন্ধ্যায় গাজীপুরের জৈনাবাজার এলাকা থেকে হাজার হাজার ছাত্র, জনতা ও শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে ময়মনসিংহের দিকে আসার পথে ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়ায় আসলে আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগসহ অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় মামুনের সামনে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে তোফাজ্জল হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা।

এতে গুরুতর আহত হয় তোফাজ্জল হোসেন। আহত তোফাজ্জলকে মামুন উদ্ধার করে প্রথমে জামিরদিয়া পপুলার হাসপাতালে পরে জৈনাবাজার এলাকায় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তোফাজ্জলের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসা দিতে অনিহা প্রকাশ করেন।তোফাজ্জলকে বাঁচানো জন্য শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের শ্রীপুরের উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সব ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন সমন্বয়ক ও ছাত্রনেতা মামুন। 

তোফাজ্জল নিহত হওয়ার পরও অদ্যাবধি কোনো মামলা হয়নি। তোফাজ্জল হত্যা ঘটনায় কোনো মামলা না হওয়ায় বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে মামুন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার পরিবারের দাবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বাক্ষাৎকার দেয়ার কারণেই মামুন হয়তো নিখোঁজ হতে পারেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!