প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট, নেই খেলার মাঠ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট, নেই খেলার মাঠ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকট। যে কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি অনেক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ না থাকায় শিশুদের শারীরিক-মানসিক বিকাশে হচ্ছে বাধাগ্রস্থ ।

শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলার ১৩টি উপজেলায় ২১৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে; এর মধ্যে সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে প্রতিষ্ঠিত ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩৮টি শ্রেণি সংকট রয়েছে। সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার ২৪৬ জন।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বলছে, শ্রেণিকক্ষ সংকট দ্রুত দূরীকরণ না হলে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে শিশুরা। এছাড়া, খেলার মাঠ না থাকায় বিপাকে পড়েছে শিশুরা।

নগরীর গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষ মাত্র চারটি। এর মধ্যে একটি আকারে অনেক ছোট। দুই শিফটে ক্লাস পরিচালনা করেও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম।

গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক বেঞ্চে বসানো হয়ে ৪-৫ জন শিক্ষার্থীকে। প্রাক-প্রাথমিকেও ফ্লোরে ঠাসাঠাসি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ক্লাস করানো হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, ক্লাসে শিক্ষার্থী বেশি হলে কোন ভাবেই বসা যায় না। বসতে পারলেও লিখতে পারি না। তাই প্রতিদিন সবাই ক্লাসে আসে না। আজকে বেশি শিক্ষার্থী আসায় প্রতি বেঞ্চে ৪—৫ জন করে বসেছি। আমাদের নতুন ক্লাসরুম না হলে পড়াশোনা ঠিকমত করতে পারবো না।

আরেক শিক্ষার্থী মানাফ মাহাদী বলেন, শ্রেণিকক্ষে প্রতিদিন আমাদের ঠাসাঠাসি করে বসতে হচ্ছে; খেলাধুলারও কোন মাঠ নেই। টিফিন দিলে বারান্দায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করা যায় না। এতে করে আমরা কোন ধরণের খেলাধুলা শিখতে পারছি না। শ্রেণি সংকট দূর করে একটি খেলার মাঠ হলে আমাদের জন্য ভালো হয়।

অভিভাবক সাগরিকা দাস বলেন, একদিকে ক্লাস সংকটের কারণে বাচ্চারা শ্রেণিকক্ষে বসতে পারে না আর অন্যদিকে খেলাধুলার কোন মাঠ না থাকায় তাদের মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। গাঙ্গিনারপাড় স্কুলটা এতো ছোট যে অভিভাবকদের বসার পর্যন্ত একটু ঠাঁই নেই। বাচ্চাদের এই স্কুলে ভর্তি করে আমরাও উদ্বিগ্ন।

সহকারি শিক্ষক আকলিমা আক্তার সোনিয়া বলেন, শিশু শ্রেণিতে ৩৭জন শিক্ষার্থী রয়েছে; এরমধ্যে আজকে ক্লাসে ২১জন এসেছে, তারপরেও জায়গা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের চারটি রুমের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এটি। রুম বড় না হলে শিক্ষার্থীদের আনন্দ উল্লাস করে পড়ানো সম্ভব হয় না। এ রুমটা অন্তত বড় করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন জাহান বলেন, বিদ্যালয়টি শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনার ভালো হওয়ায় প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায়; কিন্তু শ্রেণি সংকটের কারণে আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেককে ভর্তি করতে পারিনি। এবার বিদ্যালয়ে ২৮৫জন শিক্ষার্থী রয়েছে; তাদের জন্য মোট শ্রেণিকক্ষ চারটি। দুই শিফট করেও গাদাগাদি করে ক্লাস নিতে হয়; বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, কিন্তু কোন প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছি না।

একই অবস্থা নগরীর গোহাইলকান্দি, নওমহল এবং নামাকাতলা সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। নামাকাতলা সেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য সাতটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন; কিন্তু রয়েছে পাঁচটি। এতে উচ্চ-বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ ব্যবহার করতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বিষয়টি কতৃর্পক্ষ জানলেও কোন সমাধান মেলছে না।

গোহাইলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, এই বিদ্যালয়টিতে আশ-পাশের অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪৫ জন। শ্রেণিকক্ষ তিনটি, এতে দুই শিফট করেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। বেঞ্চে গাদাগাদি করে তাদের বসিয়ে মনযোগী করা কোন ভাবেই সম্ভব হয় না। অন্তত প্রতিষ্ঠানটি একটু সংস্কার করে দিলেও কোন ভাবে চালিয়ে নেয়া সম্ভব হতো।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন বলেন, ক্লাস্টার ভিত্তিক প্রধান শিক্ষকদের তথ্যমতে সিটি করপোরেশন এরিয়ার মধ্যে ৬৬টি এবং সদরে ৭২টি শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আকর্ষণীয় শিক্ষার পরিবেশ। উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন পিডি-৫ শুরু হলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ করে দিবেন। তা হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া সংখ্যাও কমে আসবে।

আরবি/এসবি

Link copied!