কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পূর্বাচলের ৩`শ ফিট সড়কে অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে অন্তত অর্ধশত বিলবোর্ড। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত সড়কের ১৩ কিলোটারের মধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর নির্মাধীন পূর্বাচল নতুন শহরের মধ্যে পড়েছে।
বিগত বছর গুলোতে রাজউকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে ৫০টির অধিক বিল বোর্ড স্থাপন করেছে। বিগত বছর গুলোতে ঝড়ের মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর বিল বোর্ড ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঝুকিপূর্ণ বিল বোর্ড সড়ক থেকে সরানোর জন্য রাজউক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি চেয়েছেন স্থানীয়রা। তবে খুব শীঘ্রই এসব বিলবোর্ড উচ্ছেদে মাঠে নামবে বলে দাবি রাজউকের।
রাজধানীর গাঁ ঘেষে গড়ে উঠছে নান্দনিক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। আর এই শহরে প্রবেশের জন্য নির্মিত হয়েছে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঞ্চন-কুড়িলবিশ্বরোড (পূর্বাচল তিনশো ফিট) সড়ক। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সড়ক দিয়ে প্রবেশ করলে পূর্বাচল নতুন শহরের প্রবেশদ্বার ১ নম্বর সেক্টর বালু নদীর সেতু থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত চোখে পড়ে বাহারী রংয়ের বিলবোর্ড।
বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতারা রাজউকের কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদ্বয়ের সহযোগীতায় সড়কের উভয়পাশে অন্তত অর্ধশত বিলবোর্ড স্থাপন করেছে সে সাথে পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন সেক্টরেও অসংখ্য বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি বিলবোর্ড সাইজ অনুপাতে বাৎসরিক ৪ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিভিন্ন কোম্পানীকে বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দেয়া হয়।
রাজধানীতে বিলবোর্ড স্থাপন করলে রাজউককে নির্দিষ্ট আনুপাতিক হারে মাসিক অথবা বাৎসরিক রাজস্ব দেয়ার নিয়ম থাকলেও পূর্বাচলে স্থাপন করা বিলবোর্ড গুলো থেকে সরকারী কোষাগারে কোন টাকা জমা না হওয়ায় বিপুল টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এদিকে, বিলবোর্ড রাখতে যেন কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে জন্য বিলবোর্ড কর্তৃপক্ষ দেখাশুণার জন্য প্রতিটি বিলবোর্ড বাবদ বাৎসরিক ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের।
স্থানীয়রা জানান, রাতের আধারে কোন নিয়ম না মেনে এসব বিল বোর্ড স্থাপনের কারনে প্রায় সময়ই বিল বোর্ড ভেঙ্গে ঘটছে দূর্ঘটনার। এসব বিলবোর্ডের নিচ দিয়ে চলাচল করতে সবসময় আতংকে থাকে চলাচলরত সাধারন জনগন। ৩`শ ফিট সড়কে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা এসব বিলবোর্ড গুলো উচ্ছেদে কখনোই মাঠে নামেনি রাজউক।
এত বড় বড় বিলবোর্ড সড়কটির দু`পাশে স্থাপন করা হয়েছে যা সবার চোখে পড়লেও রাজউক দেখেও না জানার ভান করে আছে। রাজউকের নাকের ডগা দিয়ে এসব অবৈধ বিলবোর্ড ঝুলছে। অথচ রাজউক কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়নি কোন কারণে তা কারোই অজানা নয়। আগামী ঝড়ের দিন আসার আগেই অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব বিলবোর্ড অনতিবিলম্বে উচ্ছেদের জন্য রাজউকের সু-দৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিলবোর্ড এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও রূপগঞ্জের ভোলাবো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিলবোর্ড গুলো রাজউকের অনুমতি ছাড়া স্থাপন করা হয়েছে স্বীকার করে বলেন, পূর্বাচলের প্লটে যেসব বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো প্লট মালিকদের সাথে কথা বলে স্থাপন করা হয়েছে।
বিলবোর্ড দেখাশুনার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাৎসরিক ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। বিলবোর্ড গুলো রাখার জন্য রাজউকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তার নিজের ৭টি বিলবোর্ড রয়েছে। পাশাপাশি ইকবাল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার রয়েছে ১৫টি এবং হাজী সেলিম নামে আরেক আওয়ামী লীগ নেতার রয়েছে ১৫টি বিলবোর্ড। তাছাড়া পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন সেক্টরে আরো ১১টি বিলবোর্ড রয়েছে। এসব গুলোই অবৈধ ভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প বাস্তবায়ন) নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে রাজউকের অনুমতি না নিয়ে একটি চক্র পূর্বাচলে কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড ৩`শ ফিট সড়কে অবৈধভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করেছে। বিলবোর্ড এসোসিয়েশন তারা তাদের বিলবোর্ড গুলো নিজেরা খুলে নিয়ে যাবে এই মর্মে ১০দিন সময় চেয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের বরাবর একটি লিখিত আবেদনও করেছিল তারা।
কিন্তু তারা সেই সময়ের মধ্যে বিলবোর্ড গুলো সড়ায়নি। ইতিমধ্যে তাদেরকে বিলবোর্ড সড়িয়ে নেয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বিলবোর্ড গুলো উচ্ছেদে রাজউক মাঠে নামবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :