লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় কৃষকের জমি দখল করে চাতাল ও গুদাম নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক জোনাব আলী (৫০)।
কৃষক জোনাব আলী উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাহার উদ্দিনের ছেলে। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি ওই গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে ও টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু। তখন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন টংভাঙ্গা গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। অভিযুক্ত এই সিরাজুল উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রতিবেশি কৃষক জোনাবের জমি দখল করে চাতাল ও গুদাম নির্মাণ করেন।
অভিযোগ আছে- সেই চাতাল ও গুদাম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে দেন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আ’লীগের সভাপতি লিয়াকত।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে দলবল নিয়ে কৃষক জোনাব আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন সিরাজুল। এরপর থেকে জমি উদ্ধারের নানান চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ভুক্তভোগী এই কৃষক।
সাম্প্রতিক সময় আ’লীগ সরকারের পতন হলে এলাকা ছেড়ে আত্নগোপনে চলে যান সিরাজুলের বটগাছ উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন ও তার সহযোগীরা। সে সময় কৃষক জোনাব আলী জমি উদ্ধারে থানা পুলিশের আশ্রয় নিলে পুনরায় সিরাজুল গ্যাংরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবারো দলবল নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তিনি বাড়িতে না থাকায় পরিবারের অন্য সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যায়।
এ ঘটনায় বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে হাতীবান্ধা থানায় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সবুজসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কৃষক জোনাব। একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন এই ভুক্তভোগী।
একই এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মুন বলেন, কৃষক জোনাব আলীর জমির ঠিক পাশের জমি ক্রয় করে পুরো অংশ দখল করে নিয়ে চাতাল ও গুদাম করেছে সিরাজুল। ওই সময় প্রতিবাদ করেও কোনো উপায় ছিল না।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক বলেন, উপজেলা আ’লীগের চেয়ারম্যান লিয়াকত নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমার জমির ওপর চাতাল ও গুদাম নির্মাণ করে দিয়েছেন। পরে এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ যুবলীগের ছেলেরা বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে যেতো। তখন আমি নিরুপায় হয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। কিন্তু আ’লীগ পতনের পর আইনের সঠিক বিচারের মাধ্যমে এখন জমি উদ্ধারের আশার আলো দেখছি। তাই থানায় অভিযোগ করেছি।
এদিকে এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান আমার চাতাল ও গুদাম নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। আমি আ’লীগের কোন পদে ছিলাম না এবং নেই। বরং আমার মা ভোটের সময় জামায়াতের এজেন্ট ছিলেন। আমার চাতাল ও গুদাম আমাদের ক্রয় ও পৈত্রিক সম্পত্তির উপর নির্মাণ করেছি।
হাতীবান্ধা থানা ওসি মাহমুদুন্নবী বলেন, জমি জমার বিষয়টি দেওয়ানী আইন। তাই জোনাব আলীর অভিযোগটি প্রসিগেশন হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং বাদিকে আদালতে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :