লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি অডিট কমিটি গঠন করেছিলেন লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউছার হামিদ। ১৩ ফেব্রুয়ারি গঠিত ওই অডিট টিম ১০ কার্য দিবসের মধ্যে অডিট রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিল।
ওই কমিটিকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসরাজ দাস তথ্য দিয়ে সহায়তা না করায় অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে বিধায় ওই কমিটি তদন্ত করবে না বলে কমিটির আহ্বায়ক, লাকসাম উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার খন্দকার মাসুম বিল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক দিলিপ কুমার ভৌমিক ও ব্যবসায় সহকারী শিক্ষক মো. কামাল হোসেন।
সূত্র জানিয়েছে, ২০০৬ সালের ১ জুলাই সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ’১৬ সালের ১৬ জুলাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান রসরাজ দাস।
শিক্ষকদের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি করে ম্যানেজিং কমিটির আস্থাভাজন হয়ে রসরাজ দাস শুরু করেন বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি। তার অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তলানিতে পৌঁছে।
সূত্রমতে, ১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ভর্তির সময় বেজ, ডায়রি, আইডি কার্ড, ক্যালেন্ডার ও সিলেবাস বাবদ ১৩৫০ জন ছাত্রী থেকে ৫শ টাকা হারে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রশিদবিহীন গ্রহণ করেছেন রসরাজ দাস। যা ক্যাশে অদ্যাবধি দেখানো হয়নি। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলমান ছিল রসরাজ বাবুর কর্মকাণ্ড।
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র, সাময়িক সনদ ও অন্যান্য ক্লাসের ছাত্রীদের ছাড়পত্র/টিসি এবং বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র প্রদান খাতের টাকা স্কুল ক্যাশে জমা হয়েছে কি না, প্রতিদিনের আয় ব্যাংকে জমা হয়েছে কি না, ডিজিটাল ফি বাবদ ১৩৫০ জন ছাত্রী থেকে বছরে ৪শ টাকা হারে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা ২০১৭ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত রশিদবিহীন গ্রহণ করা হয়েছে।
ক্যাশ বইতে এই টাকা দেখানো হয়েছে কি না, ২ জন অফিস সহকারী থাকা সত্ত্বেও ২ জন শিক্ষক দিয়ে অফিস সহকারীর কাজ করানো হয় এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর গোপন হিসাব করিয়ে তাদের গোপনভাবে সম্মানী দেওয়া হয়, সে টাকা কোথা থেকে আসে তা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কোচিং ফির টাকাও যথাযথভাবে বণ্টন হয়নি বলে সূত্রের দাবি।
সূত্রমতে, সব বিভাগে কমপক্ষে ২৫০ জন বা ২৬০ জন ছাত্রী প্রতি বছর কোচিং ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোচিং ফির টাকার কোনো হিসাব নাই। ২০২৩ সালের কোচিং ফি বাবদ ৬ লাখ টাকার মতো কালেকশন হয়েছে বলে জানা গেলেও ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো শিক্ষক, কর্মচারীদের মাঝে বিলি দেখানো হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় তা নিয়েও সমালোচনা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের টাকা খরচে অনেক অনিয়ম রয়েছে বলে জানা যায়। ওই অনিয়ম ধামা-চাপা দেওয়া এবং অনিয়মের ভাউচার পাস করানোর জন্য রসরাজ বাবুর পক্ষের শিক্ষকদের দিয়ে একটি পকেট কমিটি (অডিট কমিটি) গঠন করা হয় বলে জানা যায়। স্কুলের জন্য কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, সিসি ক্যামেরা, অফিস কক্ষে টাইলস ক্রয় ও ফিটিংস খাতে কমিশন নেওয়া এবং বেশি টাকার ভাউচার তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে।
শিক্ষদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মাসে মাসে ব্যাংক হিসাবে জমা দেন না তিনি। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রশ্নপত্র, বেজ, ডায়েরি, আইডি কার্ডের কমিশন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও তার একান্ত বিশ্বস্ত শাহজালাল ভোগ করেছে। বিদ্যালয়ের পশ্চিম দক্ষিণ পার্শ্বে অজুখানা এবং ছাত্রীদের বাথরুমের নাম দিয়ে বহু টাকার ভুয়া ভাউচার করা হয়েছে। স্কুলের পুকুরের মামলাকে কেন্দ্র করে বহু টাকার ভুয়া ভাউচার করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
৫ আগস্টের আগে পুকুরের মামলা বাবদ উকিলকে পরিশোধের জন্য তৎকালীন সভাপতি তাবারক উল্ল্যাহ কায়েসের স্বাক্ষরিত ৫০ হাজার টাকার চেক রসরাজ দাস উত্তোলন করে উকিলকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসরাজ দাস বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। তদন্ত কমিটির কাছে আমি সময় চেয়েছি তদন্ত কমিটি আমাকে সময় দেয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. কাউছার হামিদ বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। জানার পর একটি অডিট কমিটি করে দিয়েছি। তবে তিনি এ কমিটিকে সহযোগিতা করেননি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :