শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি এলাকার বিস্তীর্ণ বনভূমিতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে গত ৩ দিনে কয়েক কিলোমিটার এলাকা পুড়ে ভস্মীভূত হয়। আর এতে জঙ্গলে বসবাস করা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও বনজ গুল্মলতা আগুনে পুড়ে বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংরক্ষিত শাল কপিচ বাগান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগানে আগুন দেওয়ার নেপথ্যে সংরক্ষিত শালবনের গাছ সাবাড় ও অবৈধভাবে বনের জায়গা দখলের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে বন বিভাগ বলছে, শালবন উজার নয়, এই আগুন শুকনো মৌসুমে প্রতিবছরই কিছু দুষ্ট লোকের কারণে সংঘটিত হয়। আমরা মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করছি বন রক্ষায়।
গত ৫ মার্চ বুধবার থেকে ৭ মার্চ শুক্রবার পর্যন্ত ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি, গান্ধীগাঁও, গজনী বিট, দরবেশ টিলা এলাকার বিস্তৃত শাল বনে কমপক্ষে ২০টি জায়গায় বাতাসের তোড়ে আগুন প্রবল বেগে ছড়িয়ে পড়ছে। আগুনের তোড়ে পুড়ছে উপকারী কীটপতঙ্গ পোকামাকড়সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী এবং শাল কপিচের চারাগাছ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গারো পাহাড়ে শালবন এবং বন বিভাগের জমি দখলের মহোৎসব শুরু করার লক্ষ্যে কিছু দুর্বৃত্ত বনের গাছ কাটার সুবিধার্থে এ আগুন ইচ্ছে করে লাগিয়ে দেয়। শুকনো মৌসুম থাকার কারণে শালবনের ঝরা পাতা এবং শুকনো ছোট গাছপালায় সহজে আগুন লেগে যায়।
এই আগুন লাগার ফলে বনের শাল গাছ সহজে কাটা সম্ভব হয়। আর এ সুযোগে স্থানীয় অসাধু বন কর্মকর্তার যোগসাজশে দুর্বৃত্তরা লাখ লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়ে যায় এবং বাগানের খালি জায়গা দখল করে বসতি স্থাপন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অসাধু ব্যবসায়ী এবং বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শালবাগান ধ্বংস করতে এবং বনের জায়গা দখলে নিতেই পরিকল্পিতভাবেই আগুন লাগানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত কয়েকদিনে গজনী বিটের দরবেশ টিলার একটি শাল বাগানের কয়েকশ গাছ চুরি করে কেটে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েজের সাধারণ সম্পাদক মারুফুর রহমান ফকির বলছেন, গারো পাহাড়ের অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত। সংরক্ষিত শাল-গজারী বন ধ্বংস করার অভিপ্রায় বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কাজগুলো করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এস বি তানভীর আহমেদ ইমন বলেন, এখন শুকনো মৌসুমে শালপাতা খুবই শুষ্ক অবস্থায় বনে পড়ে স্তূপ হয়ে থাকে। এখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও গজনী অবকাশ এলাকায় টুরিস্টদের আনাগোনা বেশি। এ ছাড়া বনে গরুর রাখালের বিচরণ থাকায় তারা যে বিড়ি বা সিগারেট খায় সেই আগুন থেকেই জঙ্গলে আগুনের সূত্রপাত বলে আমরা মনে করছি।
এরই মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি স্থানের আগুন নিভানো হয়েছে। এ ছাড়া আমরা মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করছি। তবে কিছু গাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, কাটাগাছ এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :