৬ বছরেও শেষ হয়নি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও খানসামা দুই উপজেলার আত্রাই নদীর জয়ন্তিয়া ঘাটের সেতু নির্মাণের কাজ। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার লাখো মানুষ। এদিকে সম্পূর্ণ কাজ না করেই এক বছর আগে লাপাত্তা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, ‘৩৯ গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় দুই উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াতের জন্য ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জয়ন্তীয়া ঘাটে ৪৪ কোটি ১৬ লাখ ব্যয়ে ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা কনস্ট্রাকশন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরপর দু’বার কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও, কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৬ শতাংশ এগোয়। পরে অবশিষ্ট কাজ ফেলে রেখেই এক বছর আগে থেকে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে জনগণের ভোগান্তি লাঘবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও কাজ থমকে যাওয়ায় নদী পারাপারে ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়দের ভরসা কাঠের তৈরি সাঁকো, সেখানে আবার চলাচলে জন্য দিতে হয় টোল। আর বর্ষাকালে ভরসা নৌকা। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপারে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা নিত্যসঙ্গী। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি অর্থনীতি।
সরেজমিনে দেখা যায়, জয়ন্তীয়া ঘাট এলাকায় সেতুর সব পিলার স্থাপন হয়েছে। পাঁচটি অংশের ৩ টি স্প্যান ঢালাই হয়েছে। বাকি পিলার শুধু নদীর উপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী, মালবাহী ট্রলি আছে তা পাহারার জন্য অলস সময় কাটাচ্ছে দায়িত্বে থাকা ২ জন পাহারাদার।
রোগী নিয়ে জরুরি সময়ে বিপাকে পড়তে হয়। এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর সন্তুষ্ট ছিলাম যে কাজটা হলে উপকার হবে। কিন্তু ৬ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। বরং ঠিকাদারের লোকজন পালিয়ে গেছে।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, সেতুর অভাবে এই অঞ্চলের কৃষকদের কৃষিপণ্য বহনে জন্য বাড়তি খরচ হয়। এতে পণ্যের ন্যাযমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। সেতুর কাজ শেষ হলে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। তাই দ্রুত সময়ে সেতুর কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাহারাদার আব্দুল বাকী বলেন, ২০১৮ সাল সেতুর কাজ শুরুর সময় থেকে পাহারার জন্য চুক্তিতে দায়িত্বে আছি। শুরু থেকেই কাজের ধীরগতি ছিল। গত এক বছর থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ৬ মাস থেকে তারাও মাসিক বেতন পায় না। ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফল আসেনি তবুও বকেয়া পাওয়ার আশায় এখনও ২ জন পাহারা দেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টার প্রাইজের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
পাল্টাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, এই সেতুর অভাবে দুই অঞ্চলের মানুষকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে কৃষি পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ, রোগী ও জরুরী প্রয়োজনে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই দ্রুত সময়ে সেতুর কাজ শেষ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, জয়ন্তীয়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে ইতিপূর্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবুও কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক।
নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে কয়েক মাস থেকে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। সেতু নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সুরমা এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি হওয়া চিরিরবন্দর উপজেলায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি সেতু নির্মান চুক্তি বাতিল করে পুণঃদরপত্র আহবান করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :