সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

পুলিশের খাতায় পলাতক চেয়ারম্যান, অফিস করছেন বহাল তবিয়তে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৫, ১১:৫৪ এএম

পুলিশের খাতায় পলাতক চেয়ারম্যান, অফিস করছেন বহাল তবিয়তে

চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন ঝুনু। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪টি মামলার আসামি ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযুক্ত চেয়ারম্যান পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন। তবে ইউনিয়ন অফিসের দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। সরকারি অফিস আদালতে সভা মিটিংয়ে রয়েছে তার উপস্থিতি।

মৌলভীবাজার সদরের ২নং মনুর মুখ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন ঝুনু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪টি মামলার আসামি হয়েও ইউনিয়ন অফিসের টিআর প্রকল্পের হয়েছেন সভাপতি।

নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার সচেতন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। বর্তমানে ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত টিআর প্রকল্পে তিনি হয়েছেন সভাপতি।

গত মাস খানেক আগে ইউনিয়ন অফিসে একটি চুরির ঘটনা ঘটলে চেয়ারম্যান বাদী হয়ে পিয়নকে দিয়ে মডেল থানায় অভিযোগ পাঠালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার আসামি চেয়ারম্যান বাদী থাকায় তার অভিযোগ গ্রহণ করেননি মৌলভীবাজার থানা পুলিশ।

এমদাদ হোসেন ঝুনু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে ২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৮ জন ইউপি সদস্য।

অভিযোগে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দকৃত সরকারি, আধা-সরকারি (টিআর/কাবিখা) কাজে ১ শতাংশ, অন্যান্য প্রকল্পের কাজ না করে চেয়ারম্যান নিজে মনগড়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

টিসিবির পুরো মালামাল উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ না করে নিজে বিভিন্ন দোকানে চড়া দামে বিক্রি করেন এবং বাড়িতে নিয়ে যান। টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে ইউনিয়নের শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে ইউপি সদস্যদের সাথে মনোমালিন্য করে ৩ মাস মাসিক সভা বন্ধ রাখেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন ঝুনুর নামে ৪টি মামলা হয়।

বাজরাকোনা গ্রামের ভূমিহীন জাহিদ উল্ল্যা বলেন, এমদাদ হোসেন ঝুনু অনেক মানুষের কাছে থেকে টিবওয়েল দেওয়ার কথা বলে টাকা নিলেও কাউকে টিউবওয়েল দেননি। তাকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঘর দেওয়ার কথা বলে কার্ডের ফটোকপি নিলেও কোনো ঘর দেননি। সবকিছু পায় তার দলীয় আওয়ামী লীগের লোকেরা। বর্তমানে তার ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা থাকার পরও প্রকাশ্যে অফিস করে যাচ্ছেন।

মনুরমুখ ইউনিয়ন অফিসের সচিব সরোফা আক্তার বলেন, চেয়ারম্যান মামলার আসামি কি না জানি না। তিনি পদাধিকার বলে টিআর প্রকল্পের সভাপতি। এ ছাড়া আমি গিয়াস নগর ইউনিয়নের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আছি। তাই চেয়ারম্যান অফিসে আসেন কি না বলতে পারব না।

মৌলভীবাজার সদরের ২নং মনুর মুখ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমাদাদ হোসেন ঝুনুকে মোবাইলে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মো. মাহবুব বলেন, মনুর মুখ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন ঝুনুর নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা রয়েছে। তিনি পলাতক রয়েছেন।

পুলিশের খাতায় পলাতক থেকে কীভাবে ইউনিয়ন অফিসের দায়িত্ব পালন করেন- প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুলিশ তাকে পাচ্ছে না। যদি অফিসে আসেন এ সময় অফিসের কেউ এসে খবর দিলে আইনি পদক্ষেপ নেব।

মৌলভীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজউদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করবে এটা পুলিশের বিষয়।
চেয়ারম্যান মামলার আসামি হলেও ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করেনি। তাই তার অফিসে আসতে সমস্যা নেই। ইউনিয়ন অফিসের বরাদ্দ তার মাধ্যমে দিতে হচ্ছে। আর গ্রেপ্তার করা পুলিশের বিষয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!