বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

চাঁদরাতে টমটম পার্কিং নিয়ে সংঘর্ষ, বিএনপি নেতাসহ আটক ১৪

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

চাঁদরাতে টমটম পার্কিং নিয়ে সংঘর্ষ, বিএনপি নেতাসহ আটক ১৪

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টমটম পার্কিং নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুসহ ১৪ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

রোববার রাত ১১টায় এ সংঘর্ষ শুরু হলে রাত ২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এতে ১৫ টি টমটম,১ টি প্রাইভেট কার ভাঙচুর ও পথচারীসহ ৩৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় শহরে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ভয়ে পালিয়ে যান ও ঈদের আনন্দ পন্ড হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের হবিগঞ্জ সড়কে গদার বাজার নামক স্থানের একটি অংশে বিগত কয়েক মাস পূর্বে বিএনপির ওই প্রভাবশালী নেতা মহসিন মিয়া মধু বিনালাভের বাজার খোলেন। কিন্তু পূর্বে ওই গদার বাজার ছিল টমটম চালকদের রিকশাস্ট্যান্ড। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় মধু মিয়া ওই বিনালাভের বাজার পরিদর্শনে আসলে বাজারের সামনে টমটম পার্কিং করা দেখে মধু মিয়া টমটম চালকদের সাথে বাকবিতণ্ডা জড়িয়ে পড়েন।

এ সময় টমটম চালকদের এলাকার বাসিন্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আনার মেম্বার টমটম চালকদের পক্ষ নিয়ে মধু মিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন গরিব লোকদের সঙ্গে কেন অশোভন আচরণ করছেন? এক পর্যায়ে ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে মধু মিয়া ও তার লোকজনের বাকবিতণ্ডায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে মধু মিয়ার লোকজন ওই সময় প্রায় প্রায় ১৫টি টমটম ভাঙচুর করেন। তারপর শহরের ভানুগাছ সড়কে মধু মিয়ার লোকজন সাগর নামে এক পরিবহন শ্রমিক নেতার একটি প্রাইভেট কারও ভাঙচুর করেন।

এতে টমটম চালকদের এলাকা পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে এ খবর পৌঁছলে রাতে মসজিদের মাইকে এলাউন্স করে শহরের দিকে ৪‍‍`শ থেকে ৫‍‍`শ গ্রামবাসী হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল দিয়ে মেয়রের বাসায় আক্রমণ করতে আসেন। 
এদিকে শহরের চৌমুহনাতে পুলিশ অবস্হান নিয়ে ফাঁকা গুলি করতে থাকে।

অপর দিকে মেয়রের লোকজনও শহরের স্টেশন রোড থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গ্রামবাসীর ওপরে। 
এক পর্যায়ে পুলিশ সরে গেলে উভয় পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে উভয় পক্ষে ৩৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে হাসপাতাল সূত্রে।

এ সময় উপজেলার সবুজবাগ এলাকার জয় চৌধুরী নামে একজন পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সংঘর্ষ রাত ২টা পর্যন্ত চলে। 
এ সময় শহরের বিভিন্ন দোকানে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে চারদিকে ছুটে যান। পরে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যান। পরে রাত ৩টার দিকে উপজেলা প্রশাসন পক্ষ হইতে মৌলভীবাজার জেলা থেকে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ সময় ওই মেয়রের বাসায় সেনাবাহিনী তল্লাশি চালিয়ে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। সেনাবাহিনী মহসিন মিয়া মধু, তার ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন, ভাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম আহমদ, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আলকাছ মিয়াসহ ১৩ জনকে আটক করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

অপর দিকে রাতেই সেনাবাহিনীর পশ্চিম ভাড়াউড়ায় অভিযান চালিয়ে আনার মেম্বারের ছেলেকে আটক করে নিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র এএসপি আনিসুর রহমান জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মোট ১৪ জনকে তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ইসলাম উদ্দিন জানান, রোববার রাতে শহরে টমটম চালক, গ্রামবাসী ও সাবেক মেয়রের লোকজনের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে, তাতে অনেক লোকজন হতাহত হতে পারতো। পুলিশ যখন সংঘর্ষ থামাতে পার ছিল না তখন শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী তলব করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

আরবি/এসআর

Link copied!