শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:৩০ এএম

কোটি টাকার ‘রেজিস্ট্রেশন’ বাণিজ্যে সিলেট বিআরটিএ

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:৩০ এএম

কোটি টাকার ‘রেজিস্ট্রেশন’  বাণিজ্যে সিলেট বিআরটিএ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সিলেটে জিরো টলারেন্সে পুলিশ। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে সড়কে নামতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে রমজানের বেশ আগে থেকে কঠোর অবস্থানে তারা। ফলে অনটেস্ট গাড়ি নিয়ে সিলেটে যে অরাজকতা চলছিল, তা বন্ধ হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে টোকেন বাণিজ্যও। 

কিন্তু বসে নেই টোকেন বাণিজ্যে জড়িত শ্রমিক নেতাদের ‘টোকেন সিন্ডেকেট’। তারা কৌশল পাল্টেছে। এক ঢিলে এখন দুই পাখি শিকার করতে চাইছে তারা। নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ সিলেটকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। 

সিলেটসহ সারা দেশে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রদান বন্ধ। টোকেন বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরার পর রেজিস্ট্রেশন প্রদানের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। দেওয়া হয় স্মারকলিপি। 

সিলেটের প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে ‘ওপর মহলে’ কথা বলবেন- এমন আশ্বাস দেওয়ার পর একে পুঁজি করে শ্রমিক নেতা ও বিআরটিএর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে নিয়ে গঠিত নতুন সিন্ডিকেট ভিন্ন কৌশলে মাঠে নামে। 

অনটেস্ট ও চোরাই গাড়ির জন্য রেজিস্ট্রেশন এনে দেওয়ার নামে সিন্ডিকেটের সদস্যরা সিএনজি অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। তাদের এ দলে আছেন সিলেট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী। 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তার কথামতোই শ্রমিক নেতারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে বলে অর্থ তুলছেন। এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা ১৫ হাজার টাকার ব্যাংক চালানও দিচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করে, সিলেটে অনটেস্ট ও চোরাই অন্তত তিন হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ৩০ কোটি টাকার বাণিজ্যের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। 

আর এই টাকা তোলা হবে চলতি মাসের মধ্যেই। আগামী জুন মাসে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী সিলেট থেকে চলে যাচ্ছেন। তার আগে যাতে বাণিজ্যের অর্থ হাতে চলে আসে সে জন্য অটোরিকশা চালকদের ভুল বুঝিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফাইল তৈরির নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

ফাইলপ্রতি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে অনটেস্ট গাড়ির জন্য। আর চোরাই গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। 

তবে নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, যারাই এগুলো ছড়িয়েছে তারা ভুয়া তথ্য দিয়েছে। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু নেই। 

চালু থাকলেই তো অবৈধ লেনদেনের প্রশ্ন আসে। অবশ্য এগুলো যে ‘একটি চক্র’ করছে, সে কথা স্বীকার করেন তিনি। বলেন, ২০১৯ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। 

সিএনজিচালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে বলে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এবারও তা-ই হয়ে থাকতে পারে। শ্রমিকদের কেউ রেজিস্ট্রেশনের নামে চালকদের কাছ থেকে টাকা তুললে সে দায় আমার নয়। এখানে আমার কিছু করারও নেই। 

বিআরটিএ জানায়, মেট্রোপলিটনসহ সিলেটে বৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে ১৯ হাজার ২৩৪টি। আরও ৫ থেকে ৭ হাজার গাড়ি রয়েছে অনটেস্ট। 

এ ছাড়া অসংখ্য চোরাই গাড়ি রয়েছে সিলেটের গ্রামে-গঞ্জে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত অনটেস্ট গাড়িগুলো সিলেটে চলত অবৈধ টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে। পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে মাসিক টোকেন সংগ্রহ করে সেগুলো সড়কে তোলা হতো। 

বিষয়টি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে প্রকাশের পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর। অভিযুক্ত ট্রাফিক পুলিশে পরিবর্তন আনা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পুরো টিমকে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

নতুন দায়িত্বে এসে কর্মকর্তারা টোকেন নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেন। এতে লোকসানে পড়ে টোকেন সিন্ডিকেট। অবৈধ গাড়ি সড়ক থেকে উধাও হয়ে যায়। এ অবস্থায় নতুন কৌশল হিসেবে শ্রমিক নেতারা ঝুঁকেন গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের দিকে। 

কিন্তু সরকার থেকে এটি বন্ধ থাকায় সিলেট বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন দিতে পারেনি। এ সময় শ্রমিক নেতারা রেজিস্ট্রেশন শুরুর দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও সমাবেশ করেন সিলেটে। আলোচনা করেন সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে।

  সূত্র জানায়, এর পরই বিভিন্ন জায়গায় আশ্বাস দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চালকদের কাছ থেকে ফাইল সংগ্রহ শুরু করেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। 

এ কাজে নাটের গুরু হিসেবে সামনে আসেন সিলেট বিআরটিএর এডি আবু আশরাফ সিদ্দিকী। তার পরামর্শে ব্যাংকে সরকারি চালান জমা দিচ্ছেন চালকরা। সরকার থেকে চালান জমা নেওয়ার কোনো নির্দেশনা না থাকলেও তারা চালকদের বোঝাচ্ছেন, রেজিস্ট্রেশন শিগগিরই দেওয়া শুরু হবে। 

আর তা হলে শুরুতেই আগে চালান জমাদানকারীদের রেজিস্ট্রশন দেওয়া হবে। এ কারণে সিলেটে এখন ব্যাংকে রেজিস্ট্রশনের জন্য চালান জমা দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। সেই চালান কপি লেমিনেটিং করে অনটেস্ট সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে। 

চালকরা দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেছেন, শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন রেজিস্ট্রেশন শুরু হলে প্রথমে সীমিতসংখ্যক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। তাই তারা বেশি অর্থের বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার আশায় ব্যাংক চালান সংগ্রহ করে ফাইল জমা দিচ্ছেন। 

সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার এমন একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়, যিনি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১ লাখ টাকা ‘দালালে’র হাতে জমা দেন বলে জানিয়েছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক নেতা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, শুধু আশরাফ নন, বিআরটিএর সংঘবদ্ধ একটি চক্র শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে আলাল ও আবুলের নাম। 

আর বিআরটিএ’র বাইরে সেই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলতাব হোসেন, ওয়ারিছ আলী, শাহ জাহান, আবদুল আলিম ভাসানী, দেলোয়ার, জাকারিয়া, মোহাম্মদ আলীসহ কয়েকজন সিএনজি শ্রমিক নেতা। যারা আগে সিলেটে টোকেন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন।

ওই শ্রমিক নেতা জানান, আসলে ব্যাংক চালান জমা দিয়ে শ্রমিকরা একটি ইস্যু তৈরি করে রাখছেন। তা না হলে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকা অবস্থায় টাকা জমা দেওয়ার কোনো ভিত্তি নেই, তারা সেটি করতেন না। 

সিন্ডিকেটের সদস্যরা টোকেন বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার পর পুরোনো গাড়ি কেনাবেচা, অন্য জেলার অনটেস্ট গাড়ি নিয়ে আসা এবং চালান জমা দান-এই তিন সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে এগোতে থাকেন। মূলত তারা পুলিশ ও প্রশাসনকে চাপে রাখতেই নতুন কৌশলে এগোচ্ছেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!