রাজবাড়ী পৌরসভার অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হাসপাতাল রোড। প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল এই সড়ক দিয়ে। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো সড়কটি হাঁটু পানি জমে তলিয়ে যায়।
বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির দিনে এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। অসাবধানতাবশত কেউ পড়ে যাচ্ছে গর্তে, কেউবা কাদা-পানিতে পড়ে আহত হচ্ছেন।
দীর্ঘ দুই থেকে তিন বছর ধরে এই সড়কের বেহাল অবস্থা চললেও পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সড়কটির এই অব্যবস্থাপনায় নাগরিক দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জানা গেছে, রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা এলাকার পাবলিক হেলথ মোড় থেকে হাসপাতাল রোড হয়ে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কটি প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। রাজবাড়ীর প্রধান সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন বা মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করতে না দেওয়ায় হাসপাতাল রোড দিয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করে থাকে।
ফলে এই সড়কে ভারী যানবাহন ও মালবোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, বালুর ট্রাক চলাচল করায় প্রায় দুই থেকে তিন বছর ধরে সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ হয়ে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে তিনটি মসজিদ, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল, রাজবাড়ী আধুনিককৃত সদর হাসপাতাল, সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, অসংখ্য বেসরকারি ও প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিএডিসি সেচ অফিস, সারের গোডাউন, বিদুৎ অফিস, জেলা আনসার ভিডিপির কার্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
কিন্তু পাবলিক হেলথ থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় খানাখন্দের মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এ ছাড়া এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খোয়া উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে গর্ত। সড়কের পাশের ড্রেনও সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে ময়লা আবর্জনায় ড্রেনগুলো বন্ধ প্রায়। তাই বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয় সড়কে।
গত ১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টিতেই পাবলিক হেলথ মসজিদের সামনে থেকে টেকনিক্যাল স্কুল পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে যায়। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা এলাকার পাবলিক হেলথ মসজিদ থেকে টেকনিক্যাল স্কুল পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে আছে। সড়ক থেকে পানি সরানোর জন্য স্থানীয়রা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে পানি রাস্তা থেকে সরাচ্ছে। রাস্তা পানিতে ডুবে থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া সারের গোডাউন, বিদ্যুৎ অফিস, আনসার ভিডিপির অফিস, কাজিকান্দা খবিরের দোকান ২নং বেড়াডাঙ্গা সড়কের মোড়, ১নং বেড়াডাঙ্গা সড়কের মোড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে ওই সব খানাখন্দে পানিতে ডুবে আছে।
সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই পাবলিক হেলথ মসজিদ থেকে টেকনিক্যাল স্কুল পর্যন্ত সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা পৌরসভাকে জানিয়েছিলাম পানি নিষ্কাশনের জন্য। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা স্থানীয়রা টাকা তুলে মোটর দিয়ে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করছি।
এ ছাড়া শুকনা মৌসুমে ধুলোর কারণে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। এই রাস্তাটা দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থা। আমরা পৌরসভাকে কয়েকবার জানিয়েছি কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের এলাকাবাসীর দাবি অতি দ্রুত এই রাস্তা সংস্কার করে দিতে হবে।
রাজবাড়ী ভোকেশনাল মোড়ে অবস্থিত নূর জাহান ফার্মেসির মালিক মো. পারভেজ খান বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই পাবলিক হেলথ মসজিদ থেকে ভোকেশনাল মোড় পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তায় হাঁটু পানি থাকায় দোকানে ক্রেতারা আসতে চাচ্ছে না। দোকানের বেচাকেনাও কমে গেছে। বর্ষাকাল আসার আগেই এই অবস্থা, তাহলে বর্ষাকাল এলে তো এই রাস্তা দিয়ে নৌকা চালাতে হবে। অতি দ্রুত এই রাস্তা সংস্করণের দাবি জানান তিনি।
হোটেল ব্যবসায়ী ইসারত ও ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে ৩-৪ দিন রাস্তায় হাঁটু পানি থাকায় আমাদের বেচাকেনাও কমে গেছে। মানুষ নোংরা পানি মাড়িয়ে হোটেলে খেতে আসতে চায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি অতি দ্রুত আমাদের এই রাস্তা সংস্কার করে দিক। সামনে বর্ষাকাল এলে আমাদের আরও কষ্ট বেড়ে যাবে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বিগত ২-৩ বছর ধরে বৃষ্টি হলেই আমাদের এই রাস্তাটি পানিতে ডুবে যায়। নোংরা পানি মাড়িয়ে আমাদের মসজিদে নামাজ পড়তে আসতে হয়। আবার শুকনো মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালি থাকে। আমরা এর অবসান চাই।
রাজবাড়ী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মাজহারুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ীর পাবলিক হেলথ থেকে হাসপাতাল রোড হয়ে ২নং রেলগেট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ইস্টিমেট করে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেটি বর্তমানে অপেক্ষমাণ অবস্থায় রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পাস হলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :