নীলফামারীর ডোমারে রয়েছে দেশের একমাত্র ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদনের খামারটি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন দেশের কৃষকদের মাঝে অধিক ফলনের জন্য বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন করে থাকে। বর্তমানে দেশের প্রধান সবজি আলু। এই আলুর ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদনের একমাত্র খামারটি জেলার ডোমার উপজেলা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে সোনারায় ইউনিয়নে অবস্থিত। আলু বীজের খামারটি দিন দিন বহুমুখী সাফল্য অর্জন করছে।
১৯৫৭-৫৮ সালে হুকুম দখলের মাধ্যমে সরকার ডোমার খামারটি প্রতিষ্ঠা করে এবং তৎকালীন কৃষি বিভাগের তত্ত্ববধানে খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৩-৬৪ সালে ডোমার খামারটি ইপিএডিসি’র খামার বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮১-৮২ উৎপাদন মৌসুমে প্রথম এক একর জমিতে “কুফরী সুন্দরী” জাতের বীজআলু উৎপাদনের মাধ্যমে সুচনা হয় আলু বীজ উৎপাদন কার্যক্রম। বীজআলু উৎপাদনে অধিক উপযোগী মনে করে ১৯৮৯-৯০ সালে খামারটি আলুবীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে এ খামারে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমের কারনে খামারটি একটি লাভজনক খামারে পরিণত হয়েছে।
বীজ আলু চাষের উপযোগী জমির মধ্যে বীজ আলু উৎপাদনের পর পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত জমি খালি পড়ে থাকে। এ সময়টিকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী বছর বীজ আলু উৎপাদনে মাটি বাহিত রোগ যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রণ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, জমি লেভেলিং, আগাছা নিয়ন্ত্রণসহ সর্বোপরি জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য চলতি উৎপাদন মৌসুমে ৩০০ একর ব্রিধান ৯৮ জাতের আউশ ধানবীজ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়। এ চাষে শতভাগ সফল হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষি ফার্ম “ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামার”। আউশ ধান ব্যাপকভাবে আবাদের ফলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি সহ উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা
নিরসনে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলে ফার্মে কর্মরত বিজ্ঞানীরা জানায়। এ খামার মূলত আলু বীজ উৎপাদনের খামার হলেও দেশের প্রয়োজনে
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসলের পরীক্ষামূলক ও স্বাভাবিক চাষাবাদ এবং বীজ উৎপন্ন করে থাকে।
এ খামারে বর্তমান প্রধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা খামারের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি সংস্থার লক্ষ্য অর্জনে অসাধারন, ঝুকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য, প্রশংসনীয়, দৃষ্টান্তমূলক এবং নবপ্রবর্তনমূলক কাজের সারথী। প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনে অত্র খামারটি কৃষিতে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই কৃষিবিদের প্রচেষ্টায় আউশ উৎপাদন কর্মসূচীতে মোট বীজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯০ মে.টন। এই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশে আগামী মৌসুমে ৩৯ হাজার একর জমি আউশ ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। যা থেকে জাতীয় পর্যায়ে প্রায় ৬৫ হাজার মে. টন ধান উৎপাদনে যোগ হবে। আউশ ধানের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চারা রোপণের পর থেকে মাত্র ৮০ দিনেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। অর্থাৎ ধান থেকে ধান উৎপাদনে মোট সময় লাগে ১০৩-১০৫ দিন। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে রবি মৌসুমে অন্যতম লাভজনক শস্য ভুট্টা চাষ করা হয়। ভুট্টা চাষের পরে আমন রোপণের পূর্ব পর্যন্ত জমি পতিত পড়ে থাকে। যা আউশ ধান আবাদের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে। এসময় জমি পতিত না রেখে মাত্র ৮০ দিনের ব্যবধানে আউশ (ব্রিধান ৯৮) এর চাষ করে প্রতি বিঘায় ১৫-১৭ মণ ধান উৎপাদনের পরে স্বল্পমেয়াদী আমন ধানসহ আলু উৎপাদন করা সম্ভব। ব্রিধান ৯৮ অত্যন্ত স্বল্পমেয়াদী হওয়ায় কৃষকরা খুব সহজেই একই জমিতে তাদের সুবিধামত এবং কাঙ্খিত বিভিন্ন ফসল চাষ করে অধিকভাবে লাভবান হতে পারবে। অত্র খামারে বীজ আলু উৎপাদনের পর বেশিরভাগ জমি একেবারেই পতিত পড়ে থাকত পরবর্তীতে ২০২০-২১ উৎপাদন মৌসুমে ১৮৭ একর, ২০২১-২২ উৎপাদন মৌসুমে ২৪০ একর এবং ২০২২-২৩ উৎপাদন মৌসুমে জাতের ২৫৫ একর জমিতে আউশ ধানবীজ উৎপাদন কর্মসূচী ছিল। খামারে বর্তমানে ধান বীজ উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে চলমান রয়েছে, রাইস সিডিং মেশিন দ্বারা সিডিং ট্রে ব্যবহার করে আউশ ও আমন ধান বীজ বপণ করা হয়েছে। চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দ্বারা ৩০০ একর আউশ রোপণ করা হয়েছে। পরিশেষে কম্বাইন হার্ভেস্টার দিয়ে ধান বীজ ফসল সংগ্রহ করে দানা শস্য গ্রেডিং মেশিন দ্বারা ধান বীজ যথাযথভাবে গ্রেডিং করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এব্যাপারে ডোমার ভিত্তিবীজ আলু খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা জানান, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনে অত্র খামারটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বায়নের এই যুগে কৃষিই হোক দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় কাজ করে যাচ্ছে বিএডিসি’র অন্যতম বীজ আলু উৎপাদন খামারটি।