ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকান্ড

ফেনীর নিজাম হাজারীসহ ৪৬৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম

ফেনীর নিজাম হাজারীসহ ৪৬৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে মামলার প্রধান আসামী হন ফেনী ২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। এতে নিজাম হাজারী ছাড়াও ৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১ জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইজন পৌর মেয়র, ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ১১ জন পৌর কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

মহিপালে হত্যাকান্ডের শিকার অটোরিকশাচালক মো. সবুজের ভাই ইউসুফ বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৪’শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় বাদি অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ অবরোধে অংশ নেয়া ছাত্রদের গুলি করার নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে নিজাম হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ অসহযোগ কর্মসূচিতে বাদির ভাই ফেনী শহরের
অটোরিকশা চালক সবুজ অংশ নেন। দুপুর ২টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করলে সবুজ সার্কিট হাউস রোডের দিকে দৌড়ে চলে যান। সেসময় ওই এলাকায় থাকা ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানে আলম, মাহবুবুল হক লিটনের গুলিতে সবুজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্য আসামিরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। নিহত সবুজের মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে পুনরায় হামলার আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার টুমচর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। নিহত সবুজ ওই গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে। 

হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জানে আলম, ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার আহম্মদ মুন্সী, ফেনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কোহিনূর আলম রানা, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাজারী, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল আদর, সাইফুল ইসলাম পিন্টু, ফেনী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম মোহন, যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সোহেল, ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হক রিপন, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন, ফেনী পৌর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহার, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আবছার আপন, ফেনী পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহার, ফেনী পৌর
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বাবলু, যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম নাদিম, ফেনী পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ মিলন প্রকাশ পিএস মিলন, পৌর কাউন্সিলর সাহাব উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জিয়াউল আলম মিষ্টার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রাজু, পৌর কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন লিটন হাজারী, নিজাম হাজারীর পিএস মো. ফরিদ মানিক, পৌর কাউন্সিলর রুবেল চৌধুরী, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদল, ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাকা, মাতুভূঞা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, কাজীরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ, লেমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ উদ্দিন নাসিম, কালিদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম, পৌর কাউন্সিলর আশরাফুল আলম গিটার, মোটবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ, পৌর কাউন্সিলর হারুনুর রশীদ মজুমদার এবং পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলসহ ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এ মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মঙ্গলবার মামলার আসামি মো. ফরিদ মানিককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে থাকা মানিক নিজাম উদ্দিন হাজারীর পিএস হিসেবে পরিচিত। আরো ১ মামলায় প্রধান আসামী নিজাম হাজারী জেলার মহিপালে ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহতের ঘটনায় আরো ১টি মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নিহত শিক্ষার্থী জাকির হোসেন শাকিলের মা কোহিনুর আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এতেও ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দায়ের করা মামলায় ৭১ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১৫০/২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। নিহত শাকিল সোনাগাজী উপজেলার কুঠিরহাট মান্দারী গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এ ঘটনায় দুইজন বাদী হয়ে থক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত; গত ৪ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। দুপুর দুইটার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত করে তোলে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা গোলাগুলি ও সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হন। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ ও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক।

আরবি/জেডআর

Link copied!