বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রিপন শীলকে হত্যার অভিযোগে হবিগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক এমপি আবু জাহিরকে প্রধান আসামি করে ৫৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া একই মামলায় আরো অজ্ঞাত ১৫০/২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২ টার দিকে নিহত রিপন শীলের (২৭) মা রুবি শীল বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন, পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, আবু জাহিরের পিএস সুদীপ দাস।
সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) নুর আলম মামলা সততা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা দেওয়া হয় এ সময় একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবু জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘিরে ফেলেন।
এ সময় আবু জাহিরের বাসা থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে বারবার গুলি ছোরা হয়। এতে রিপন শীল নামের ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এছাড়াও এ ঘটনায় আরও অর্ধশতাধিক আহত হয়।
ঘটনার দিন ৪ আগস্ট দুপুর ১২ টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন। বেলা যত বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা বৃন্দাবন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থানের পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহরের কোর্ট মসজিদ এলাকায় পুনরায় জড়ো হন। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে চৌধুরী বাজার অভিমুখে রওনা হন।
এদিকে শহরের পৌর টাউন হলের সামনে সকাল ১১টা থেকে অবস্থান নেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এ সময় তাঁদের লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সমবেত হতে দেখা যায়। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির, দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরীসহ দুই থেকে তিন শ নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের চৌধুরী বাজারের দিকে অগ্রসর হয়ে তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। গুলিতে ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। পরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা এমপি আবু জাহিরের বাসায় আশ্রয় নেয়। এই সময় আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘিরে ফেলেন। তখন তাদের লক্ষ্য করে বাসার ভেতর থেকেও গুলি ছোড়া হয়। বাসার দিকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছন।
আপনার মতামত লিখুন :