গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে নিহত নারায়ণগঞ্জ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমানতের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এশার নামাজের পরে চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে নিহতের লাশ নিয়ে আসা হয়। পরে সেখানে উপস্থিত হন অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ হাজারো ছাত্র জনতা।
পরে সেখান থেকে চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মসজিদের সামনে নিহতের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো ছাত্র জনতা অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নাই, পার্থিব জগতে পার শূণ্যতা পূরণ করার সামর্থ্য আমাদের নাই। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে পরকালে সবচেয়ে সুন্দর পুরস্কার প্রদান করেন সেজন্য আমরা প্রার্থনা করবো। তার পরিবারকে আমরা বলবো, আপনি আপনার ভাই হারিয়েছেন, আমরা সারাদেশ আপনাদের পাশে আছি। যেকোন প্রয়োজনে আমাদের স্মরণ করবেন, আমাদের হাজারো ব্যস্ততা থাকলেও আপনাদের ছেলে হিসেবে ভাই হিসেবে আমরা ছুটে আসবো। পুরো বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের ভাইয়েরা বোনেরা, আপনারা এগিয়ে না আসলে ফ্যাসিস্ট সরকারের যে পতন সেটি আসলে সম্ভব হতোনা। নারায়ণগঞ্জ কিংবা চাষাঢ়া কিংবা যাত্রাবাড়ি সায়েদাবাদে আমাদের ভাই বোনদের যে অংশগ্রহণ, জনস্রোত এটি আমাদের বিজয়ের যে মিছিল সে মিছিলকে এগিয়ে নিয়েছিল।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, নারায়ণগঞ্জ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমানত এই আন্দোলনে অংশ নিতে গেলে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের খুনি বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মেরে ও গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
শহীদ আমানতের ছাত্রদলের কমিটির সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বলেন, যদি আমানত কারো কাছে কোন ভুল করে থাকে তাহলে দয়া করে তাকে মাফ করে দিয়েন।
এসময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আমানত দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িতে। গত ৫ আগস্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হন ৪০ বছর বয়সী এই যুবক। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্ত্রী হাসিনা মমতাজকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন কাজ শেষ করে রাতের মধ্যেই বাসায় ফিরে আসবেন। তবে আমানত সেদিন রাতে বাসায় ফিরতে পারেনি। ওই ঘটনায় নিখোঁজ দাবী করে পোস্টারিংও করা হয়েছিল। ৯ দিন পর ১৪ আগষ্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ পাওয়া গেছে। আমানতের পরিবার ও সহযোগীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে নিহত হয়েছেন তিনি।
আমানতের স্ত্রী হাসিনা মমতাজ বলেন, ৫ তারিখ বাসা থেকে বের হয়ে ও যখন আর ফিরেনি। তখন থেকেই আমরা অনেক খুঁজেছি ওকে। কিন্তু কোথাও কোনো সন্ধান পাইনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মর্গে গিয়েও খুঁজেছি। ওকে গুলি করা ছাড়াও এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যে চেনাই যায়নি। দুই তিনবার আমরা মর্গে ওর লাশ দেখেও চিনতে পারিনি। তবে ও খালা গিয়ে পরে লাশ শনাক্ত করেছে। কারণ বাবা মা মারা যাওয়ার পর আমানতকে ওর খালাই বড় করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :