বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর ভাঙনে একটি গুচ্ছগ্রাম যমুনায় বিলীন হয়েছে। উচু বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বেশ কিছু পরিবার। কয়েকদিনে হাজার বিঘা কৃষি জমি যমুনায়। গত কয়েকদিন ধরেই উঠানামা করছে যমুনা নদীর পানি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন থেকে উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাটশেরপুর গুচ্ছগ্রামে যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। কয়েকদিনের যমুনার ভাঙনে গুচ্ছগ্রামের অর্ধশত বাড়িসহ প্রায় শতাধিক পরিবারের সবগুলো বাড়ির বসতভিটা যমুনায় বিলীন হয়েছে। গুচ্ছগ্রামের ঘর দরজাগুলো ভেঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার উঁচু বাধে বা দূরে কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন।
সেখানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হাটশেরপুর গুচ্ছগ্রামের উপর দিয়ে এখন প্রমত্তা যমুনা বহমান হয়েছে। সেখানে এখন শুধুই অথৈ পানি। কয়েকদিনের নদী ভাঙনের শিকার এ গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে সুজাতপুর এবং চকরথিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত মুজিব কিল্লা। এছাড়া ভাঙন হুমকিতে রয়েছে সুজাতপুর, বিরামের পাঁচগাছি, সাহানবান্ধা আশ্রয়ন প্রকল্প, হাটশেরপুর এবং পূর্ব বোহাইল গ্রামের শতশত পরিবার।
কথা হয় হাটশেরপুর গ্রামের সামচুল হক আকন্দের ছেলে বাবু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এ গ্রামেই আমার বেড়ে ওঠা। এ গ্রামের সাজানো বাড়িতে আমি বেড়ে উঠেছি। আম, জাম, কদবেল থেকে শুরু করে সকল প্রকার ফলের গাছ ছিল বসতভিটায়। যমুনার ভাঙনে বসতভিটার সবটুকুই এখন যমুনায়। সেখানে এখন শুধুই থৈথৈ পানি। কথা হয় নদী ভাঙনের শিকার কয়েকজনের সাথে। তারা বেশ কয়েকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বসতি গড়ে তুলেছিলেন এই হাটশেরপুর গুচ্ছগ্রামে। নদী ভাঙনের শিকার এ গ্রামের মৃত ইলেম বকস আকন্দের ছেলে তহসিন আলী আকন্দ ২০ বার, মোজাম আকন্দের ছেলে আব্দুল বারি আকন্দ ৬ বার, ফকির প্রামানিকের ছেলে তোফাজ্জল প্রামানিক ২৮ বার, শফিকুলের স্ত্রী ইমিলে বেগম ৭ বার করে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে শেষ আশ্রয় নিয়েছিলেন এই গুচ্ছগ্রামে। তাদের এ শেষ আশ্রয়টুকুও কেড়ে নিয়েছে যমুনা। তারা এখন বিভিন্ন এলাকায় নতুন আশ্রয়ের খোঁজে।
নদী ভাঙনের শিকার জুয়েল প্রামানিকের স্ত্রী রেহেনা বেগম এবং শফিকুলের স্ত্রী ইমিলে বেগম জানান, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে যমুনায় ভিটেমাটি হারিয়ে এখন তারা পার্শ্ববর্তী একটি উঁচু বাঁধে একচালা ঘর তুলে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীর পানি উঠানামা করছে। গত ১৫ আগষ্ট পানির উচ্চতা ছিল ১৫.২৮ মিটার। ১৬ আগস্ট ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে পানির উচ্চতা হয় ১৫.৩৮ মিটার। গতকাল ১৭ আগস্ট পানি ১ সেন্টিমিটার কমে উচ্চতা হয়েছে ১৫.৩৭ মিটার। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। তাই পানি এখনো বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি আরও কয়েকদিন এরকমই উঠানামা করবে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার কোনও তথ্য আপাতত আমাদের কাছে নেই। হাটশেরপুর গুচ্ছগ্রাম যখন ভেঙে যায় তখন দেশে ব্যাপকভাবে অস্থিতিশীলতা চলমান ছিল। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডও আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। অনেক অফিসিয়াল নথিপত্রই পুড়ে গেছে। এসব অস্থিতিশীলতায় ব্যস্ত থাকায় হাটশেরপুর গুচ্ছগ্রাম রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নদীর গর্ভে বিলীন হওয়া গুচ্ছগ্রামে আশ্রিতদের অন্যত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :