যশোর: যশোরে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই রফিক ও তার স্ত্রী ঝরণা ইয়াসমিনের নামে স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের অনুসন্ধানের পর উপপরিচালক মোশারফ হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র স্পেশাল জজ নাজমুল আলম এ আদেশ দিয়েছেন। তাদের দুইজনের জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৫ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ নির্দেশ দেন। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি সিরাজুল ইসলাম।
এর আগে এ নিয়ে দফায় দফায় লিখেছেন যশোরের প্রখ্যাত সাংবাদিক হানিফ ডাকুয়া। যার ফলে প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন তিনি। কুখ্যাত টিএসআই রফিকের বিরুদ্ধে তার দৃড় অবস্থান লেখা ও স্বচিত্র প্রতিবেদন ব্যাপক সাড়া ফেলে । তার আহ্বানে ভুক্তভোগীরা দফায় দফায় অভিযোগ জমা দিতে থাকেন দুদক সহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরগুলোতে।

তিনি জানান, দুদকের কাছে প্রথমে টিএসআই রফিকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ আসে। এক পর্যায়ে তার কাছে স্বামী-স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব চাওয়া হয়। কিন্তু তার পাঠানো হিসেবে ব্যাপক অমিল পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে তার বিপুল সম্পত্তির ফিরিস্থি।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সারাদেশে টিএসআই রফিক দম্পতির সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলায় সাততলা বিল্ডিং, যশোর শহরে একটি ছয়তলা বাড়ি, একটি দুইতলা মার্কেট, একটি দুইতলা ভবন, ঢাকাতে ফ্লাট, রাজশাহী শহরে বাড়ি, খুলনায় জমি ফ্লাটসহ বিভিন্ন এলাকায় তার খামারসহ নানা ধরণের ব্যবসা রয়েছে।
ক্রোকের আদেশ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে রফিকের রফিকুল ইসলামের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল মৌজাতে ১৮৩ দশমিক ৪ শতক। একই উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা মৌজাতে ৬৭ শতক। সর্বমোট ২৪৯ দশমিক ০৪ শতক। যার মূল্য ১২ লাখ ৫০ হাজার ৯২৫ টাকা। রফিকের স্ত্রী ইয়াসমিনের গোপালগঞ্জ পৌরসভার খাটরা মৌজাতে ৭ শতকের মধ্যে ২ দশমিক ৩৩ শতক। বাকি অবশিষ্ট তার শ্যালিকার নামে ক্রয় করা। জমির মূল্য ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৬ টাকা। স্থাপনার মূল্য ১ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৬৬ টাকা।
যশোর পৌরসভার বারান্দি মৌজায় ৬ দশমিক ৬৭ শতক জমি। যার মূল্য ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। স্থাপনার মূল্য ৯১ হাজার ৬১ হাজার ৬৯৭ টাকা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সেনপাড়া পার্বত্য মৌজাতে ৮ দশমিক ২৪ কাঠার ০০৯০ দশমিক ৬ অযুতাংশ। জমির মূল্য ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৭১ টাকা। ফ্ল্যাট নির্মাণ ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা জেলার বিলামালিয়া মৌজাতে ৬ দশমিক ৫০ শতক; যার মূল্য ৮৮ হাজার টাকা।

খুলনা সিটি করপোরেশন মুজগুন্নি আবাসিক মৌজাতে ০ দশমিক ০৬৬১ একর। যার মূল্য ১০ হাজার টাকা। খুলনা ফুলতলায় ৯ নম্বর মশিয়ালিতে ৭ শতক। যার মূল্য ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন হড়গ্রাম মৌজাতে ০ দশমিক ০০৩০৮ একর ১০ লাখ টাকা। যশোর সদরের পাগলাদহ মৌজাতে ১৯১ শতক জমির মূল্য ১১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। খুলনার ফুলতলা মশিয়ালি মৌজাতে এক একর ৫০ শতক স্ত্রীর নামে। বাকি অংশ শ্যালিকার নামে ক্রয় করা। যার মূল্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, অবশিষ্ট মূল্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। যশোর কোতোয়ালির পাগলাদাহ মৌজাতে ৮৫ শতক। যার জমির মূল্য ৪০ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা। স্থাপনার মূল্য ৮৯ লাখ ১৫ হাজার ২২৩ টাকা।

যশোর পৌরসভার বারান্দী মৌজাতে ১ দশমিক ০৩৮ শতক জমির মূল্য ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। স্থাপনার মূল্য ৯২ লাখ ০৩ হাজার ৬৪৭ টাকা। একই স্থানে ৬ দশমিক ৫০ শতকের বাড়ির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। মোট ৪২৯ দশমিক ৫৪৪ শতক; যার মোট মূল্য ৫ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭০ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি যেখানেই চাকরি করেছেন সেখানেই গড়েছেন অঢেল সম্পত্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি ছিলেন যশোরের এক অপ্রতিরোধ্য পুলিশ কর্মকর্তা। সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তিনি সম্পত্তি জবর দখল করেছেন। যশোর শহরের বড় বাজার, বেজপাড়া, আরএনরোড, মুড়লি মোড়, পুলেরহাট মোড়, পাগলাদহ গ্রামে রয়েছে এ দম্পত্তির বিপুল পরিমান সম্পত্তি।
এখানেই শেষ না তিনি জমির দলিলে দাম দেখিয়েছেন বাজার দাম থেকে অনেক কম। গোপালগঞ্জ জেলার সুকতাইল মৌজায় পাঁচ শতক জমির দাম দেখিয়েছেন মাত্র এক হাজার টাকা। টিএসআই রফিক বর্তমানে ফরিদপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :