ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
স্বপ্নই রয়ে যাচ্ছে পারাপারে ফেরী সার্ভিস

চীনের দুঃখ হুয়াংহু নদী, কুতুবদিয়ার দুঃখ চ্যানেল পারাপার

এস কে লিটন, কুতুবী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ০৬:৩৬ পিএম

চীনের দুঃখ হুয়াংহু নদী, কুতুবদিয়ার দুঃখ চ্যানেল পারাপার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের বিভিন্ন নদী পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহজ করার জন্য ফেরী সার্ভিস, সী ট্রাক সার্ভিস, ব্রীজ নির্মাণ, এমনকি টানেল তৈরী করে মূল ভূ-খন্ডের মানুষের নাগরিক সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। নদী, হাওর, দূর্গম পাহাড়ি এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ দ্বীপ গুলোতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাইল ফলক হিসেবে দৃশ্যমান। এতদ্ব অঞ্চলের মানুষ পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পাঁচটি ভোগ করে যাচ্ছে সম্মিলিত জনগণ। কিন্তু এ সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত কেবলমাত্র কুতুবদিয়া দ্বীপের দুই লক্ষাধিক মানুষ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল থেকে শুরু করে প্রত্যকটা জিনিসের দামের পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় দ্বিগুণ। কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, বাংলাদেশ মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বঙ্গোপসাগরে পাঁচশত বছর পূর্বে জেগে উঠা  চরের নাম কুতুবদিয়া দ্বীপের নামকরণ করা হয়। সেই সময় থেকে জনবসতি গড়ে উঠে এ দ্বীপে। তখন থেকেই এ পর্যন্ত ধারাবাহিকতায় চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে দ্বীপে বসবাসরত জনগোষ্টি কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সাম্পান, ডেনিস বোট, স্প্রীট বোটের মাধ্যমে মূল ভূ-খন্ডের সাথে যোগাযোগ করে আসছে। সেই সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে পারাপারের জন্য দৃশ্যমান পাঁচটি জেটি ঘাট নির্মান করেছে সরকার।

ঐ পারাপার জেটি ঘাট ব্যবহার করে দৈনিক পঞ্চাশ হাজারেরও বেশী মানুষ। কুতুবদিয়া চ্যানেল দিয়ে (কুতুবদিয়া হতে) পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া, বাঁশখালীর ছনুয়া,মহেশখালীর মাতারবাড়ি যাতাযাতের জন্য ব্যবহার করে থাকে সাম্পান, ডেনিস বোট, স্প্রীট বোট। আবার মালামাল আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে বড় বড় মালবাহি ট্রলার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার নৌ পথে যাতাযাত করে থাকে। কুতুবদিয়া দ্বীপের জন্য কঠিন বিষয় ছিল বিদ্যুৎ। তাও গত বছর সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিয়ে দ্বীপকে আলোকিত করেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দ্বীপের মানুষের একটাই দাবী পারাপারে ফেরী সার্ভিস চালু করা।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এলাকার লোকজন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ১৯৯১ সনের ঘূর্ণিঝড়ের পর দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় উঠানামার জন্য পাঁচটি জেটি নির্মাণ করা হয়। ঐ জেটি দিয়ে পারাপার যাত্রীরা পায়ে হেঁটে মূল খন্ডে যায়। সরকার এ জেটিগুলো ইজারা দিয়ে যাত্রীদের থেকে টোল আদায় করে সুবিধা ভোগ আসছে। সাথে মালামাল থাকলে কথাই নেই মোটা অংকের টোলের টাকা গুনতে হয়। জেটি বা ঘাট পারাপারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষ।  কুতুবদিয়া দ্বীপ হতে বের হলেই জেটিতে পায়ে হেঁটে গেলেই পাঁচ টাকা আবার মগনামা জেটিতে উঠে পায়ে হেঁটে গেলেই পাঁচ টাকা টোল গুনতে হয়। প্রশ্ন উঠে কেন? পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে টোল আদায় করতে হয় শুধু কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষের। মগের মুল্লুক। দেশের বিভিন্ন নদীর উপর সেতু ও নদীর নিচ দিয়ে টানেলে টোল আদায় করে থাকে শুধু যানবাহনের। মানব সম্পদের উপর টোল আদায় করতে দেখিনি পৃথিবীর কোন দেশে। কিন্তুু কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষের ক্ষেত্রে দুই পাশে পায়ে হেঁটে গেলেই গুনতে হয় টোল।

দুবাই প্রবাসী এনামুল হক জানান, কুতুবদিয়ার জনগন পারাপারে জন্য পাঁচটি জেটি নির্মাণ করা হয়। এসব জেটি দিয়ে পারাপারের জন্য ব্যবহৃত যানবাহনের মানসম্মত নয়। বর্তমান সময়ের জন্য আধুনিক যান্ত্রিক বোটের ব্যবস্থা,সী ট্রাক,ফেরী সার্ভিস চালুর দাবী তুলেন তিনি।

কুতুবদিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র আইনজীবি আইয়ুব হোছাইন বলেন, জন্ম থেকেই জ্বলছি আমরা কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষ, সরকার জেটি ঘাট আর কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপার ইজারা দিয়ে থাকে। এক শ্রেণীর লোক ইজারা নেয়ার সময় দরপত্রে প্রতিযোগিতা দিয়ে ইজারা নেয়ার জন্য আকাশ চুঙ্গি মূল্যে দরপত্র জমা করে। তারপর এ দরপত্রের টাকা আদায় করতে সাধারণ মানুষের উপর চড়া মূল্যে টোল আদায় করতে স্টিম রোলার চালায়।

আরবি/জেডআর

Link copied!