জয়পুরহাট: সোনালি আঁশখ্যাত পাট চাষে দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। অথচ এক সময় দেশের প্রধাণ অর্থকড়ি ফসল ছিল পাট। পর্যাপ্ত জলাশয়ের অভাব, পচনের জন্য পানি সংকট, ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, সার, কীটনাশকের দাম নাগালের বাইরে, উৎপাদন খরচ বেশিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষি প্রধাণ এ জেলায় পাটের আবাদ কমতে শুরু করেছে। এই জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয় জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি উপজেলায়। আক্কেলপুর ও ক্ষেতলালের সামান্য জমিতে পাট চাষ হলেও কালাই উপজেলায় পাট চাষ হয়না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয় ৩ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। সে হিসেবে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ কমেছে ২৩৮ হেক্টর জমির। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ষাটের দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিল এবং বড় বড় জুট মিলের চাহিদা পূরণে কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক লাভবান হতেন। অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করত। ফলে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকায় কৃষকরাও ঝুঁকে পড়েছিলেন পাট চাষে।

বর্তমানের বেহালদশা উল্লেখ করে পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর কৃষক রমজার আলী জানান, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে, বেশি টাকায় শ্রমিক নিতে হয়েছে এবং খরচ বেশি হওয়ায় লাভ করতে পারেননি। সরকারিভাবে পাটের যে বীজ সরবরাহ করা হয়, তা পাওয়া যায় অনেক দেড়িতে। ফলে সরকারের দেওয়া সুযোগ তাদের কাজে লাগে না।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের জামতলি গ্রামের কুষক হেলাল উদ্দিন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলেও প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৮ মণ পাট হয়। এতে যে পরিমাণ খরচ তাতে পোষায় না। এজন্য গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছি।
আক্কেলপুর উপজেলার কৃষক মো. রাশেদ জানান, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে তার শ্রমিক বিল বাবদ খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। আর এ কাজের জন্য সবসময় শ্রমিকও পাওয়া যায় না। জমি থেকে পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সরকারি খালগুলো প্রভাবশালিরা দখল করে নেওয়ায় আগের মতো যেখানে সেখানে পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয়না। তিনি আরও বলেন, খালগুলো ভরাট করার ফলে পানি সল্পতার দেখা দিয়েছে। তার জমি থেকে অনেক দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ হয়েছে অনেক। সকল পক্রিয়া শেষে হাটে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন তিনি। এতে তার খরচ ওঠা তো দূরের কথা, যে আশা নিয়ে তিনি পাট চাষ করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। এখন থেকে অন্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

একই উপজেলার কৃষক রেজাউল শেখ জানান, পাট চাষ করে কোনো লাভ নেই। পরিশ্রমই বৃথা। পাট চাষের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তার নায্য মূল্য পাওয়া যায়না।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী এর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মোঃ মজিবুর রহমান জানান, কম বৃষ্টিপাত, শ্রমিকের মজুরি বেশি, পাট রোপণ ও পচানোতে সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে পাট চাষে অগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। এদিকে খরচ ও সময় কম লাগায় সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। তবে পাটের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে বছরের পর বছর লোকশান গুনতে থাকার ফলে উচ্চ ফলনশীল অন্য ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। ফলে জেলায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লেও কমছে পাটের চাষ।