ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে বড় সাইজ

তবুও রাজগঞ্জ বাজারে দৈনিক দুই হাজার কেজি ইলিশ বিক্রি

এমদাদুল হক সোহাগ, কুমিল্লা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুমিল্লা নগরীর ঐতিহ্যবাহী রাজগঞ্জ বাজার। শতবছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বাজারটি। কুমিল্লাবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই বাজার। ১৯ শতকের শুরুর দিকে রাজগঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠা হয়। এই বাজারে এমন কোন জিনিস নেই যা পাওয়া যায়না। এক সময় চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী-নোয়াখালী থেকেও মানুষ এই বাজারে কেনাকাটা করতে আসতেন। বাজারের মধ্যে অন্যতম মাছ বাজার। এই বাজারে প্রতিদিন দুই হাজার কেজি ইলিশ খুচরা ও পাইকারী বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ মাছ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মধ্যবিত্তরাও শতবার চিন্তা করে কিনছেন ইলিশ। বাজার ঘুরে দেখা যায়,সাদা বরফে জ্বলজ্বল করছে রুপালি ইলিশ। যেন দেখলেই লোভ জাগে কিনতে। এক কেজি আটশ গ্রাম ওজনের মাছ আড়াই হাজার টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা কেজি করে, এক কেজি দুশ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা করে, কেজি ওজনের মাছ ১২শ থেকে ১৪শ টাকা, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ টাকা থেকে ৮০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম এত বেশী কেন জানতে চাইলে, বিক্রেতা মোমিনুল ইসলাম রবিন জানান, বন্যার কারনে নদীতে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়ে ইলিশ মাছ অনেক নিচে চলে গেছে। জেলেরা আগে প্রচুর ইলিশ ধরতে পারতেন এখন তেমন ধরা পড়ছেনা। সেজন্য ইলিশের দাম কিছুটা বেশী। 

মো. জনি নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, সরবরাহ বেশী হলে দাম কম থাকে, সরবরাহ কম হলে দাম বেশী। এই বাজারের আরেক বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম রতন ওরফে ইলিশ রতন জানান, ভালো ইলিশের দাম সবসময়ই বেশী। বড় সাইজের ইলিশগুলো সবসময়ই বেশী দামে বিক্রি করতে হয়। তার ঢালায় থাকা প্রায় দুই কেজি ওজনের ইলিশের কেজি আড়াই হাজার টাকা বলে জানান। 

জানা যায়, কুমিল্লা রাজগঞ্জ বাজার থেকে আশপাশের বাজারের ব্যবসায়ীরা পাইকারী ইলিশ কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন গড়ে দুই টন অর্থাৎ দুই হাজার কেজি ইলিশ বিক্রি হয় রাজগঞ্জ বাজারে। 

ইলিশের ঢালার সামনে দীর্ঘক্ষণ দামাদামি করে অনেকেই অন্যমাছ কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। ইরফানুল ইসলাম তাফসীর জানান, তিনি ইলিশ মাছ কিনতে এসেছেন। তবে ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম দেখে তিনি ইলিশের বদলে ছয়শ টাকা কেজিতে সামুদ্রিক কোরাল মাছ কিনে নিয়েছেন। বাজারে ইলিশ কিনতে আসা প্রায় সকলেই ইলিশের দাম বেশি বলে মন্তব্য করেন। তবে বাসায় গুরুত্বপূর্ণ মেহমান বা আত্মীয় স্বজন বেড়াতে আসলে অনেকটা নিরুপায় হয়েই ইলিশ কিনতে হয় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। তবে নগরীর ধনী শ্রেণির বা মন বড় এসব মানুষ ঠিকই ইলিশ কিনে খাচ্ছেন বলে জানান বিক্রেতারা। এদিকে, রাজগঞ্জ বাজারে জাঁটকা ইলিশ বিক্রি করতেও দেখা গেছে কয়েকজন বিক্রেতাকে। এ বাজারের ক্রেতা কুমিল্লা নগরীর সুনামধন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মোদাচ্ছির হোসেন জানান, রুপালি ইলিশ ধনী-গরিব সকলে যেন কিনে খেতে পারে সেদিকে জেলে, আড়ৎদার, মজুদকারী ও বিক্ররতাদের খেয়াল রাখতে হবে । প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে কেউ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে না পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, ইলিশের যেহেতু মূল্য নির্ধারণ করা নেই সেহেতু ভোক্তা অধিকার আইনে আমাদের কিছু করার থাকেনা। তবে কম দামে কেউ মাছ কিনে বেশী দামে বিক্রি করলে বা প্রতারণা করলে সেটা খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি রাজগঞ্জ ইলিশের বাজার শিগগির তদারকি করার কথা জানান।