অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কুমিল্লা জেলায় তিন হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৮ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখার বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে বন্যাক্রান্ত উপজেলা ১৪টি। বন্যাক্রান্ত হয় ১০ লাখ ৯০ হাজার ৫৯২ জন মানুষ। এখনো পানিবন্দি এক লাখের বেশী পরিবার। তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা প্রতিদিনই কমছে। বর্তমানে ৩৩০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ৩৭০জন মানুষ আছেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন বলছেন এ পর্যন্ত ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার (জিআর) নগদ বরাদ্ধ বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া জিআর চাল ৮০২ টন, ১৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, সাড়ে দশ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সহ অন্যান্য সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার বুড়িচং উপজেলায়। গোমতীর নদীর বাঁধ বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়া এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়ায় এ ক্ষতি হয়েছে। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, বুড়িচং উপজেলার রাস্তা ও সড়ক বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই বুড়িচং উপজেলায় ৫৫৬ কোটি ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪৩ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া জেলার নাঙ্গলকোটে ৫২৮ কোটি ৮৯ লাখ ৬ হাজার ৭৭৮ টাকা, চৌদ্দগ্রামে ৪৬১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৯ টাকা, লাকসামে ৩৯২ কোটি৬৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮০ টাকা, আদর্শ সদর উপজেলায় ৩৩১ কোটি৮৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫৩ টাকা, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২৫৮ কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৫২৩ টাকা, দেবীদ্বারে ২৩৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫ হাজার ৭৬৮ টাকা, মনোহরগঞ্জে ১৭৫ কোটি ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ১৯১ টাকা, বরুড়া ১২১ কোটি ৯৬ লাখ, ৪৮ হাজার ১৫৭ টাকা, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ৭৯০ টাকা, লালমাই উপজেলায় ৭১ কোটি ৩২ লাখ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা, তিতাসে ৫৬ কোটি ২৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৩ টাকা, মুরাদনগরে ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৬ টাকা, দাউদকান্দিতে ৯ কোটি ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৪ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সরজমিনে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কংশনগর ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, গোমতী নদীর পানি অনেকটাই কমে গিয়ে মুল নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রাহ্মণপাড়ার আছাদনগর এলাকায় এখনো পানি থই থই করছে। তবে পানিতে ডুবে থাকা সড়কগুলো ভেসে উঠেছে। তলিয়ে যাওয়া আমন ধান সহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে থাকা আধাপাকা ধান কোমর সমান পানিতে নেমে তুলছেন কৃষকেরা। অনেকের বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় মানুষের ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকেই গৃহহীন হয়ে গেছেন। আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় হতাশায় পরেছেন এসব মানুষ। তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকের বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেলেও আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়ছেন না এসব কারনে। বাড়িঘর মেরামত বা নতুন করে তৈরির আর্থিক সামর্থ নেই তাদের।
এ বিষয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান, আরো সরকারি বরাদ্ধের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা করা যাবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারীভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ব্যাপক সহায়তা কার্যক্রম চলমান আছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক কাজ আরো চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান এই কর্মকর্তা।