রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাহাবুল ইসলাম, রাজশাহী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম

মৃৎশিল্পে সফল উদ্যোক্তা দুলাল

মাহাবুল ইসলাম, রাজশাহী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম

মৃৎশিল্পে সফল উদ্যোক্তা দুলাল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শৈশব-কৈশোরের বেড়ে ওঠা প্রত্যন্ত গ্রামের ‘খাঁটি মাটি’র হাত ধরেই। একারণেই দুই যুগ আগেও জীর্ণতায় আচ্ছন্ন মৃৎশিল্প নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ ছিলো দুলাল আলীর (৫৫)। শৈশব পেরিয়েই অভাবের সংসারে হাল ধরেছিলেন রিকশা চালিয়ে। এরপর শুরু করেছিলেন অটো গ্যারেজ। করেছেন কাঠ মিস্ত্রির কাজও। তবে এসবের কোনটিতেই খুব বেশিদিন স্থির হতে পারেন নি তিনি। একারণেই প্রায় ১৫ বছর আগে তার এক ওস্তাদের পরামর্শে মৃৎলিল্পকে আকড়ে ধরেন। আর এটিকে আকড়ে ধরেই বর্তমানে রাজশাহীর সফল মৃৎশিল্প উদ্যোক্তা দুলাল।

নগরীর সিটি বাইপাস টুলটুলিপাড়া মোড়ে ১৫ বছর ধরে মৃৎশিল্প পণ্য বিক্রি করে আসছেন তিনি। প্রতিদিনই এখানে ক্রেতারা পণ্য কিনতে আসেন। মৃৎশিল্পের বাহারি ডিজাইনের বিশাল সমাহার নগরীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। নগরীর তরুণ উদ্যোক্তারাও দুলালের অন্যতম ক্রেতা।

তিনি বলেন, কয়েকদশক আগেও গ্রাম কিংবা শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে থাকতো মাটির প্লেট, গ্লাস, সানকি, কলস, পানির জগ, মগ, চায়ের কাপ, নাস্তার বাটি, বোল, হাঁড়িসহ মাটির তৈরি আববাবপত্র। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এসব পাত্রের ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে। মূলত মাটির পাত্রের উপকারী দিকগুলো অনেকেই জানেন না বলে এর ব্যবহার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে মানুষ। মাটির পাত্রে রান্না, খাবার সংরক্ষণ এবং খাওয়ার জন্য মাটির তৈরি পণ্য ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে। তাই ঐতিহ্যবাহী এসব পাত্রের ব্যবহার ধরে রাখার প্রয়াসে তিনি এখনও কাজ করে যাচেছন।

তিনি আরও বলেন, মাটির আসবাবপত্র ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়াস ফিকেই যাচ্ছিলো। তবে গত ৫-৭ বছরের মধ্যে মাটির এসব আসবাবপত্রসহ মাটির সৌখিন জিনিসপত্রের চাহিদা উর্ধ্বমুখী। যদিও রাজশাহীর স্থানীয় মাটির পণ্যগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে। একারণেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি মাটির জিনিসপত্র এনে বিক্রি করছেন।

দুলাল বলেন, মাটির তৈরি পণ্য এখন দেশের ঐতিহ্য হিসেবে অনেকেই শখ করে মাটির তৈরি প্লেট ও গ্লাসে খাবার খেতে পছন্দ করে। আবার মাটির তৈরি ঘর সাজানো, অফিস সাজানোর জন্য নান্দনিক সৌন্দর্যমন্ডিত পণ্য তৈরি হচেছ। যেগুলো প্লাস্টিক বা প্রতিযোগী অন্য শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি দেশের অনেক জায়গা থেকে পণ্য সংগ্রহ করি। আর দেশের বিভিন্ন জেলায় আমার কাস্টমারও আছে। তবে আমি খুচরার পাশাপাশি পাইকারি সেল এখন বেশি দেয়। স্থানীয় বেশকিছু তরুণ উদ্যোক্তাও আমার থেকে জিনিসপত্র কিনে অনলাইন মার্কেটে বিক্রি করেন। যদিও আমার কোন অনলাইন ব্যবসা নেই, তবে মুঠোফোনের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত অনেক কাস্টমারকে কুরিয়ারে পণ্য পাঠায়।

তিনি আরও বলেন, আমি বিয়ে করার পর যখন প্রথম মেয়ে সন্তান হলো, তখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। ওই সময় আমার এক ওস্তাদ মাটির জিনিসপত্র বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে দিন আমি হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম এই বলে যে, এখন এসব মাটির জিনিসপত্র কে কিনবে। এটি বলার পেছনেও কারণ ছিলো। সে সময় প্লাস্টিক পণ্যের ভালো বিপ্লব ঘটানো হয়েছিলো।

সবকিছুকে ছাপিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে মৃৎশিল্পের সঙ্গী হয়েছিলেন দুলাল আলী। সে সময় মাটির বহুল  ব্যবহার্য পণ্যগুলোতে তার টার্গেট ছিলো। তবে সময়ের পরিবর্তনে এখন মাটির সৌখিন পণ্যের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে বলে জানান দুলাল।

তিনি বলেন, যখন শুরু করি, তখন দিনে ৫০-৬০ টাকার করে বিক্রি হতো। তাও হাড়ি-পাতিল-খোলা এগুলো। আর এখন হাড়ি-পাতিল-খোলার চেয়ে নান্দনিক ডিজাইনের ওয়ালমেট, ফুলদানিসহ ঘর সাজানোর জিনিসপত্র বেশি বিক্রি হয়। আমি প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মাল বিক্রি করি। আর যখন মেলা চলে যখন দৈনিক ১৫-২০ হাজার টাকার বেচাবিক্রিও হয়।

দুলালের মৃৎলিল্পের সমাহার থেকে নিজের পছন্দের পণ্যটি খুঁজে নিচেছলেন নিলফামারীর গৃহবধূ সামিয়া আক্তার। তিনি বলেন, রাজশাহীতে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছি। এই দোকানটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভালো লাগলো। তাই বাসায় গিয়ে রেস্ট নিয়ে আবার আসলাম। এখানকার পণ্যগুলোর ডিজাইনগুলো অনেক সুন্দর। আবার নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোন পণ্যের উপর ডিজাইনও করে দেয়া যাবে বলে জেনেছি। খুবই ভালো লাগছে।

আরেকজন নগরীর বিনোদপুরের বাসিন্দা আজমীরা খাতুন। ৭ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ওয়ালমেট কিনতে। তিনি বলেন, বাচ্চা অনলাইনে ওয়ালমেট দেখে খুব বাইনা  ধরেছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, এটা সবচেয়ে বড় দোকান, পাইকারি পণ্যও বিক্রি করে। একারণে আসলাম। এখানকার পণ্যের সমাহার ভালো।

উদ্যোক্তা দুলাল আলী বলেন, ক্রেতাদের রুচি অনুযায়ী আগেই ডিজাইন করে রাখা সম্ভব হয় না। এ কারণে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইনও করে দেয়া হয়। আমার এখানে দুইজন পার্ট টাইম আর্টিস্টও কাজ করে। সবমিলিয়ে ক্রেতাদের কাছে এখন পর্যন্ত পজেটিভ সাড়া পাচ্ছি। সামনে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবো, এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। 

আরবি/জেডআর

Link copied!