কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন বন্ধসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে। যা দিয়ে এক মাস উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা। এছাড়া মালামাল চুরি, পাচার, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বেহাল অবস্থায় রয়েছে প্রকল্পটি। কয়লার সংকটে প্রকল্পটি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় গ্রিডে এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের।
গত বছরে জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যু প্রকল্পের দুটি কেন্দ্র চালু করা হয়। বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেন্দ্রগুলোর কমিশনিংয়ের জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে ২২ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আনা হয়। চুক্তি অনুযায়ী কয়লার সর্বশেষ চালান আসে আগষ্টের মাঝামাঝি। গত আগস্ট মাসে জাপানি প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি শেষ হয়েছে। এই কোম্পানীর সরবরাহ করা কয়লার মধ্যে অবিশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আগামী এক মাস।

নিয়ম অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশনের সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগেই কোলপাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দরপত্র আহবানের মাধ্যমে কয়লা কেনার নিয়ম ছিল। কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কয়লা কেনা আটকে গেছে। উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ানো বিষয়টি রায়ে অপেক্ষায় বর্তমানে আপীল বিভাগে ঝুলে আছে।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সময় মতো কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবী জানান তিনি। কোলপাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে একমাস পর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে, প্রকল্পের ভিতর থেকে কোটি কোটি টাকার মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধেই ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট প্রকল্পটির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের নির্দেশে একটি জাহাজে করে সরিয়ে নেয়ার সময় ১৫ কোটি টাকার তামার ক্যাবল জব্দ করে নৌ বাহিনী। এসময় আটক করা এর সাথে জড়িত ৫ জনকে। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। এই ঘটনায় আটক হয়েছেন প্রকল্পটির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু ৩১ আগস্ট নয়, এর আগেও অসকোর নাম ব্যবহার করে দুই কন্টিনার মালামাল গায়েব করে দেয় প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান।
এছাড়া গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তদল রাতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় ডুকে লুটপাটের চেস্টা চালায় বলে জানায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত
সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও সহকারী ব্যবস্থাপক মিজানুল ইসলাম।
এদিকে, সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আলফাজ উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক মিজানুল ইসলাম সহ এই প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।

২০২৩ সালে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যাত্রা শুরু করে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪৬ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কয়লার সংকটে প্রকল্পটি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় গ্রিডে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।