ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বেনাপোল দিয়ে ভারতে পালাচ্ছে অপরাধীরা, সহযোগিতায় কারা?

যশোর (বেনাপোল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ০৯:০৮ পিএম

বেনাপোল দিয়ে ভারতে পালাচ্ছে অপরাধীরা, সহযোগিতায় কারা?

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে পালাতে শুরু করেছে নানান অপরাধীরা। রুট হিসেবে
বেশি ব্যবহার করছে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত। তবে অপরাধীদের পালানো রোধে সীমান্তে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড
বাংলাদেশ (বিজিবি)।

ভারতে প্রবেশের আগে বিজিবি, পুলিশ, এনএসআই ও ডিজিএফআই সদস্যরা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। গত এক সপ্তাহে বেনাপোল
ইমিগ্রেশন কাস্টমস থেকে ৩ জন আটক হয়েছে। তবে আরো কতজন ভারতে চলে গেছে সেটা কেউ বলতে পারছে না। আর যারা সাধারন যাত্রী
তাদের যাতায়াতে কোন সমস্যা নেই। এদিকে ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টে কাস্টমসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অনেক অপরাধীরা
পালানোর সুযোগ পাচ্ছে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যায় সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে নানান অনিয়ম, দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতা, সরকারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। বিদেশ ভ্রমনে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। এতে সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করে। সীমান্ত পথের পাশাপাশি ইমিগ্রেশন কাস্টমসে পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যাত্রীদের উপর নজরদারি শুরু করে। এতে ৩ জন আটক হয় বিজিবির হাতে। তবে বিজিবি সতর্ক থাকলেও চেকপোষ্ট কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা করে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছে ভারতে।

গত ২৩ আগস্ট চেকপোস্ট কাস্টমসের একটি বন্ধ গেট খুলে যশোর জেলাছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক তানজিদ নওশাদ পল্লবকে ভারতে পালানোর সহযোগিতা করে কাস্টমস সুপার সিবলী নোমান ও কামরুন্নাহার।

এসময় বিজিবির সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাকে আটক করে। অবৈধ ভাবে গেট খুলে প্রবেশের ঘটনা ধরা পড়ে সিসি ক্যামেরায়।
এদিকে বিভিন্ন পরিচয়ে পাসপোর্টযাত্রী ছাড়াও ইমিগ্রেশন কাস্টমস ভবনে বহিরাগতদের বিচারণ রয়েছে। এদের মাধ্যমে ও নানান অনিয়ম ঘটছে
অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস হাউসের সুপারেন্টেন্ড মোকলেছুর রহমান জানান, তাদের দুই সহকর্মীর কথায় কাস্টমসের এনজিও অনিমা বন্ধ গেট
খুলে দিয়ে ওইদিন ৫ জন পাসপোর্টধারীকে ইমিগ্রেশন ভবনে প্রবেশ করায়। এদের মধ্যে এক জন ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি। সিসি
ক্যামেরায় সেটা দেখা গেছে। তবে বিষয়টি কাস্টমসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন। এ ঘটনার পর থেকে ঐ গেটটি সম্পূর্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পাসপোর্টধারীরা প্রবির মিত্র জানান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের পর ভারতে প্রবেশের অনুমতি হচ্ছে তাদের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান জানান, নিয়ম রয়েছে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনে কর্তব্যরত বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাসপোর্ট দেখিয়ে পরে যাত্রীরা ভারতে যাবে। কিন্তু শুন্য রেখায় বন্ধ থাকা কাস্টমস গেট খুলে আত্মীয় পরিচয়ে ভারতে পারাপার করে
কর্মকর্তারা। এতে ওই যাত্রীর ভ্রমন ট্যাক্স কেটেছে কিনা বা যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশির সুযোগ আর থাকে না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম হয়ে
আসলেও দেখার কেউ নেই।

দূনীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির শার্শা উপজেলা শাখার সভাপতি আক্তারুজ্জামান লিটু বলেন, কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা অপরাধীদের ভারতে পালাতে সহযোগিতা করে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সাইফুল্লা সিদ্দিকী জানান, অপরাধীরা যাতে ভারতে পালাতে না পারে সে ব্যাপারে
নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারীদের নজরদারিতে রাখছে।

উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহে আটকরা হলেন, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিব নওশাদ পল্লব, ঢাকার নবাবগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব হালদার ও ছুটি না নিয়ে পরিচয় গোপন করে ভারতে যাবার সময় বিজিবি সদস্য শাওন ঘোষকে আটক করা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!