ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জায়গা দখল করে কলেজ নির্মাণ, ৩০ বছর মানুষের দ্বারে দ্বারে ভূক্তভোগী

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

জায়গা দখল করে কলেজ নির্মাণ, ৩০ বছর মানুষের দ্বারে দ্বারে ভূক্তভোগী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নানা রোগে জর্জরিত শরীর যে কোন সময় না ফেরার দেশে চলে যেতে পারি। শেখ রাসেল কলেজ নির্মাণে জোর করে দখলে নেওয়া আমার ৬১ শতাংশ জমি মৃত্যুর আগে আমি ফেরত পেতে চাই। এই আক্ষেপ ৭০ বছরের বৃদ্ধ গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার হিজলবাড়ি
গ্রামের গোসাইদাস হাজরার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের নামে ৩০ বছর আগে কলেজ নির্মাণের সময় বেদখল হওয়া জায়গা আজও ফেরত পায়নি কৃষক গোসাইদাস হাজরা। বৃদ্ধ বয়সে নিজের ৬১ শতাংশ জায়গা উদ্ধারের জন্য তিনি বছরের পর বছর ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। গোসাইদাস হাজরা উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি গ্রামের মৃত নরেন্দ্রনাথ হাজরার ছেলে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি গ্রামে ১৯৯৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের নামে শেখ রাসেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় অন্যত্র জমি দেওয়ার কথা বলে গোসাইদাস হাজরার ৬১ শতাংশ জমি জোর করে দখলে নেওয়া হয় কলেজটি নির্মাণের জন্য। আজও সেই জমি ফেরত পাননি তিনি। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও নিজের নামের জায়গা ফেরত না পেয়ে দিশেহারা ভুক্তভোগী গোসাইদাস হাজরা।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে হিজলবাড়ি গ্রামে সাবেক এলাকার রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ, সিদ্ধেশ্বর হালদার, গৌর চন্দ্র বিশ্বাস, সুভাষ চন্দ্র হাজরা, নিরোধ বরণ বিশ্বাসসহ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী গোসাইদাস হাজরাসহ এলকার কয়েকজন ব্যক্তির জায়গা ও কিছু পরিমান খাস জায়গার উপরে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। গোসাইদাস তখন তার ৬১ শতাংশ জায়গার উপরে কলেজ নির্মাণে বাঁধা প্রদান করেন। সেই বাঁধা উপেক্ষা করে এলাকাবাসী কলেজ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যায়। কলেজটি নির্মাণের পরে রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০২২ সালে অবসরে যান।

এদিকে গোসাইদাস হাজরার জায়গা নিয়ে এলাকায় কয়েক দফা সালিস বৈঠক হয়। সালিস বৈঠক থেকে তাকে অন্যস্থান থেকে সমপরিমান জায়গা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ ৩০ বছর অতিবাহিত হলেও গোসাইদাস হাজরাকে তার জায়গা দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ দখলে নিলেও নিয়মিত জায়গার কর পরিশোধ করে আসছেন তিনি।

এদিকে ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি করা হয়। সরকারিকরণের পর অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈসহ এলাকার রাজনৈতিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়েও গোসাইদাস হাজরা তার জায়গা ও অর্থ কোনটাই পায়নি।

গোসাইদাস হাজরা বলেন, শেখ রাসেল কলেজ নির্মাণের সময় আমার ৬১ শতাংশ জায়গা নেওয়া হয়েছে। এ সময় আমি বাঁধা দিয়েছিলাম। কিন্তু কলেজটি যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা আমার বাঁধা উপেক্ষা করে কলেজ নির্মাণ করেন। এরপর আমাকে অন্যত্র জায়গা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্থ করা হয়।

এ বিষয়ে কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, গত ৩ মাস আগে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট বিজন বিশ্বাসসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গোসাইদাস হাজরার দুই জায়াগার বিষয়ে কলেজে বসে সালিস বৈঠকে হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য স্থান থেকে গোসাইদাস হাজরাকে সমপরিমান জায়গা দেওয়া হবে বলে সালিস বৈঠকে
থেকে সিন্ধান্ত হয়েছিল।

সরকারি শেখ রাসেল কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত হাজরা বলেন, তিন মাস আগে গোসাইদাস হাজরার জায়গার ব্যাপারে যে সালিস বৈঠক হয় সেখান থেকে কলেজে কর্মরত শিক্ষকদেরকে জায়গা বা অর্থ দিতে বলা হয়। কিন্তু আমাদের কলেজে ফান্ড না থাকার কারণে আমরা দিতে পারিনি।
তাছাড়া কলেজ নির্মাণ হয়েছে ৩০ বছর আগে। এখন এটা সরকারিও হয়েছে। শিক্ষকরা কেন অর্থ দিয়ে জায়গার মূল্যে পরিশোধ করবে? 

আরবি/জেডআর

Link copied!