যশোর: টানা বন্ধ থাকার পর দেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের সবচেয়ে বড় যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ার সাতমাইল পশুর হাট নতুন করে চালু করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে আনন্দ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার (১০) সকাল থেকে হাটটিতে গরু ছাগল এবং ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে ভরপুর হয়ে উঠে।
জানা যায়, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে হাটটি ইজারা না নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পরিচালনা করতো স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কবির বকুল ও কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান ফিরোজ টিংকু। তাদের কাছ থেকে ব্যাপারীরা ৩ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাপারী কার্ড গ্রহণ করলেও গরু প্রতি তাদের কাছ থেকে ৫ শত টাকা করে আদায় করা হতো। এছাড়া, সাধারণ ক্রেতাদের কাছে থেকে গরু প্রতি ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকা আদায় করা হতো।
অথচ গরু হাট ইজারা না হওয়ায় সরকারি পাশ মুল্য ছিলো ৪ শত থেকে ৬ শত টাকা। তবে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর হাটটি পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ওই সব নেতারা গা ঢাকা দেয়। পরে ছাত্রজনতাকে সঙ্গে নিয়ে হাটটি দুদিন পরিচালনা করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি বকুল ও টিংকুর কাছ থেকে করা ব্যাপারী কার্ডের কোন সুবিধা পাইনি কার্ডধারী ব্যাপারীরা। হাটে কার্ডধারী ব্যাপারী ও সাধারণ ক্রেতাদের একই মুল্যে প্রতিটি গরুর পাশ শুরু হলে ক্ষোভে ফুসে উঠে কার্ডধারী ব্যাপারীরা। হাটে আন্দোলন শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটার আশঙ্কায় তখন হাটটি বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
পরে বাগআঁচড়া সাতমাইল গরু হাট বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে সাধারণ ক্রেতা ও গরু ব্যবসায়ীরা এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে সেটি প্রশাসনের নজরে আসে এবং মঙ্গলবার থেকে গরুর হাটটি নতুন করে খুলে দেন উপজেলা প্রশাসন।
গরুর ব্যাপারী আজম বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে এই হাটের সাথে জড়িত। এখানে গরু কেনা-বেচা করি। এবার হাটটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতাশায় ভুগছিলাম। কারণ সারাবছর খামারের গরু লালন-পালন করে এখন মাথায় হাত দেওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। বাইরে থেকে ব্যাপারী না এলে আমাদের গরু লোকশানে বেচাকেনা করতে হতো। এখন পশু হাটটি সচল হওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি।
স্থানীয় বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের বলেন, এই হাটটি এর আগে প্রায় ১০ বছর ইজারা নিয়ে চালিয়েছে এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল। তিনি দীর্ঘ সময় বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে হাট পরিচালনা করেছেন। চলতি বছর হাটের কোন ইজারা না নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা হাটটি পরিচালনা করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর হঠাৎ প্রশাসন হাটটি বন্ধ করে রেখেছেন এটা দুঃখজন। এই হাট থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতে প্রশাসনও জড়িত ছিলো বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, সাতমাইল গরু হাটটি পরিচালনা করতে ১৩০ থেকে ১৫০ জন জনবল প্রয়োজন। এতো জনবল উপজেলা প্রশাসনের না থাকায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে কিছুদিন হাটটি বন্ধ রাখা হয়েছিলো। পরে বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। তাদের নির্দেশে পশু হাটটি আবারও চালু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ বঙ্গের সব থেকে বড় পশুহাট শার্শার সাত মাইল পশুহাট। এখানে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার দুদিন হাট বসতো। দুদিনের এ হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয়। সরকারিভাবে প্রতি বছর মোটা অংকের টাকায় এ হাট ইজারা দেওয়া হয়। গত বাংলা ১৩২৮ সালে সাতমাইল পশুহাটের ইজারা ডাক ছিল সাড়ে ৮ কোটি টাকা, ১৩২৯ সালে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ও ১৩৩০ সালে এ হাটের ডাক ছিল সাড়ে ১০ কোটি টাকা।
তবে নতুন বছর ১৩৩১ সালে এ হাটের কোন ডাক বা ইজারা হয়নি। যে কারনে পূর্বের ইজারাদারেরা সরকারি আইন অমান্য করে হাটের খাজনা আদায় করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :