ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগী মেহেরপুরের নোমান এখন কোটিপতি

রাব্বি আহমেদ, মেহেরপুর
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৮:৩৭ পিএম
আল নোমান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গ্রামের সহজ সরল ছেলেটা কয়েক বছরের মধ্য কোটিপতি। কয়েক গ্রামের মধ্য দুই কোটি টাকা ব্যয়ে করেছেন ট্রিপলেক্স বাড়ি। অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে যার কষ্টে দিন পার হতো। সেই ছেলে ঢাকা থেকে কোটি টাকার গাড়িতে আসেন বাড়িতে। গ্রামে কিনেছে কয়েক কোটি টাকার জমি। হঠাৎ করে এমন আমল পরিবর্তনে গ্রাম জুড়ে সাধারন মানুষের মাঝে জন্মায় নানা প্রশ্ন। বলছিলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বড় বামুন্দী গ্রামের আব্দুল্লাহ আল নোমানের কথা। তিনি এই গ্রামের কৃষক গোলাপ রসুলের ছেলে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় গিয়ে এমন পরবর্তীন আসে তার।  আওয়ামী সরকারের টানা তিন বারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন এই আল নোমান। তার নাম শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র (SPBK)। সেখানে সভাপতি হিসেবে কাজ করেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি মো. মিজানুর রহমান এবং তার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার বড় বামুন্দী গ্রামের আবদুল্লাহ আল নোমান।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আল নোমান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান উপদেষ্টা করে মিজান এবং নোমান এই এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করেন। একটি এনজিওর লাইসেন্স পেতে যেখানে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে এনএসআই এর ছাড়পত্র পেতে। সেখানে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই ক্ষমতা খাটিয়ে তৈরি করে এই এনজিওটি।  এই এনজিও প্রতিষ্ঠার পরেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয় নোমানের। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দপ্তরের কাজগুলোকে জোর খাটিয়ে নেয় এনজিওটি। কাজের জন্য আসাদুজ্জামান খান কামাল ফোন করতেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

বেসরকারি শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) এর প্রায় দেড় শতাধিক কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতিয়ে নেন তারা। অনেক অভিজ্ঞ ও নামী এনজিওদের বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ জেলার কাজ নেন তারা।  শত কোটি টাকার মধ্যে প্রায় অর্ধশত কোটি নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে মিজান এবং নোমান।  দেখা গিয়েছে, নোমান যেখানে গত ৭-৮বছর আগেই টাকার অভাবে ঢাকায় চলতে পারত না। সেখানে সে গত চার বছরের মধ্যেই গ্রামে করেছে ট্রিপলেক্স বাড়ি। বাড়িতে আছে জীমনেসিয়াম ও সুইমিং পুলের ব্যবস্থাও।

গ্রামে কিনেছেন ৩০ কোটি টাকার জমি। এলাকায় শোনা যায় গত চার বছরে গ্রামে যে জমি বিক্রি হয়েছে না কেন সেটি এই নোমান হস্তগত করেছে।  এর বাহিরেও ঢাকার আমিন বাজারে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রজেক্টে আছে প্রায় তিন কোটি টাকার জমি। এছাড়াও সাভারের হোমটাউন গ্রীন সিটিতে আছে অর্ধ কোটি টাকার জমি। এর বাহিরে ঢাকাই তার নিজস্ব রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট, চড়েন একটি দামি গাড়িতেও।

আল নোমানের ট্রিপলেক্স বাড়ি। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বলা বাহুল্য এই মিজান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে গুলি করেছিল।  এবিষয়ে সরজমিনে আল নোমানের গ্রামের বাড়িতে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য গেলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর স্ত্রী হুমায়রা খানকে পাঠিয়ে জানান, আল নোমান অসুস্থ কাল সরাসরি কথা বলবে। এখন তিনি কোন কথা বলতে পারবেন না। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাংবাদিক যাওয়ার ঘটনায় রাতেই পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে যান নোমান।

পরবর্তী সময় তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে নাম্বার টি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও এই নোমান গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ইলেকশন অবজারভার কনসার্টিয়াম (ইওসি) নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। যার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।