ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

দেড়শ পুলিশ পাহাড়ায় থেকেও নথি চুরি

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০১:২৯ এএম

দেড়শ পুলিশ পাহাড়ায় থেকেও নথি চুরি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম আদালত থেকে চুরি হওয়া ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথির (ডকেট) মধ্যে কোনোটিই মূল নথি ছিল না। সবই ছিল মহানগর সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) কাছে রক্ষিত ফটোকপি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগরপুলিশ, মহানগর আদালতের (পিপি) মফিজুল হক ভুঁইয়া।

ইতোমধ্যে চুরি হওয়া নথিগুলো ভাঙারি দোকান থেকে উদ্ধার করেছে কতোয়ালি থানা পুলিশ।

অবসরকালীন সময়ে আদালত ভবন থেকে নথি চুরির পর পুরো আদালত ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি পিপিসহ আইনজীবীরা। 

তাদের দাবি, আদালত ভবনসহ আশপাশে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পুলিশ দায়িত্বে থাকার পরও তাদের সামনে দিয়ে নথি চুরির বিষয়টি আদালতের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদালত ভবনের নিরাপত্তা ও দৈনন্দিন পুলিশি কার্যক্রমের জন্য দুই বেলায় (দিন-রাত) প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭০ জন পুলিশ নিয়োজিত থাকে। এর মধ্যে আদালতের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ লাইন থেকে আলাদাভাবে পুলিশ প্রদান করে সিএমপি। থাকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের টহল টিমও। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে পুলিশ মোতায়েন করে নগর পুলিশ। অবসরকালীন ছুটি থাকার কারণে আদালত ভবনে সাধারণ মানুষের যাতায়াত সংরক্ষিত থাকার পরও দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাথায় করে ৯ বস্তা নথি চুরি করা বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা। 

কোতোয়ালি থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নথি চুরির সঙ্গে জড়িত রাসেল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে, পাথরঘাটার ভাঙারির দোকান থেকে ৯ বস্তা নথি উদ্ধার করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম জানান, রাসেলকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পরে বিভিন্ন দফায় মাথায় করে সে নথিগুলো সরিয়েছে। একই কথা বলেছেন নথিচুরি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত আর কিছু জানা না গেলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালত ভবন থেকে মাথায় করে নথিগুলো নিয়ে যাওয়া বিষয়টি বিস্ময়কর। তারা আরও জানান, আদালতের বারান্দা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বস্তা সরিয়েছে চোর। আদালত চত্বরে এত পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকার পরও কারো চোখে না পড়া আদালতের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি-ক্রাইম) রঈস উদ্দীন জানান, আদালত খোলা থাকাকালে বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকলে দিন এবং রাতে দেড়শ পুলিশ মোতায়েন করা হয়; যারা আদালতের দৈনন্দিন কাজসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। তবে আদালত বন্ধ থাকলে মোতায়েন করা পুলিশের সংখ্যা অনেক কম থাকে বলে জানান তিনি। উপপুলিশ কমিশনার প্রসিকিউশন হুমায়ুন কবির জানান, আদালত ভবনে দীর্ঘদিন ধরে রঙের কাজ চলছে। যে কারণে আদালত বন্ধ হওয়ার পরও অনেকের যাতায়াত ছিল। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত প্রথম শ্রেণির একটি গুরুত্বপূূর্ণ জায়গা। সেখান থেকে নথি চুরির বিষয়টি আমাদের আতঙ্কিত করেছে। আদালতের নিরাপত্তা বাড়ানোসহ দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের আরও বেশি সক্রিয় এবং দায়িত্বে সজাগ থাকা প্রয়োজন জানিয়ে অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, পুরো আদালত ভবনকে সিসি টিভির আওতায় আনা অনেক বেশি জরুরি।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন, আমি সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে যোগদান করেছি গত ২১ অক্টোবর। যোগদানের অনেক আগে থেকে আদালতের বারান্দায় নথির ফটোকপিগুলো বস্তায় মোড়ানো ছিল। তিনি আরও জানান, ২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে নথিগুলো বারান্দায় রেখেছিলেন সাবেক পিপি আব্দুর রশীদ। যেহেতু অনেক আগে থেকে বারান্দায় ছিল এবং আমার কক্ষে নথিপত্র রাখার জায়গা ছিল না সে কারণে নথি সরানো হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আদালত ভবনে আনওয়ান্টেড মানুষের প্রবেশ ঠেকাতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা আগামীতেও ঘটতে পারে। 

পুলিশি নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, অবকাশকালীন সময়ে আদালত ভবনে বাইরের মানুষ কীভাবে ঢুকে বলেন?

আরবি/জেডআর

Link copied!