ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পানি সরছে কক্সবাজারে; হোটেলবন্দীরা ছুটছেন সৈকতে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম

পানি সরছে কক্সবাজারে; হোটেলবন্দীরা ছুটছেন সৈকতে

ছবি, সংগৃহীত

কক্সবাজার: বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ার জনবহুল, নদী মাতৃক, নিম্নভূমি বিশিষ্ট একটা দুর্যোগ প্রবন দেশ। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অস্থায়ী ও স্থায়ী নেতিবাচক এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অতি বন্যা এবং খরা নিয়মিত দুর্যোগে রুপ নিয়েছে।

দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় কক্সবাজার শহর। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে জমে থাকা পানি সাগর ও নদীতে নামতে শুরু করে। সকাল থেকে শহরের প্রধান সড়ক, কলাতলী সৈকত সড়কের পানি পুরোপুরি সরে যায়। দুই দিন ধরে হোটেলকক্ষে আটকে থাকা পর্যটকের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে, এবং তারা দল বেঁধে ছুটে যান সমুদ্রসৈকতে। কয়েকটি উপসড়কে কাদা ও ময়লা পানি পুরোপুরি না সরার কারণে পর্যটকেরা কিছুটা দুর্ভোগে পড়েন।

► নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পর্যটকরা
এখনো বৈরী আবহাওয়ায় কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। সাগরে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতের বালুচরে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পর্যটকদের সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

► তিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ
এদিকে, নদীতে প্রচণ্ড রোলিং থাকার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনটি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  শনিবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এই নির্দেশ দিয়েছে। নৌরুটগুলো হলো; ঢাকা-হাতিয়া, বেতুয়া-হাতিয়া এবং ঢাকা-খেপুপাড়া।

 

বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলে বৈরি আবহাওয়া এবং সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদীতে প্রচণ্ড রোলিং থাকার কারণে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা থেকে হাতিয়া এবং বেতুয়াগামী এবং বেতুয়া এবং হাতিয়া থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে খেপুপাড়াগামী ও খেপুপাড়া থেকে ঢাকাগামী- এই তিনটি উপকূলীয় অঞ্চলের নৌ পথের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

একইসাথে, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে মুন্সিগঞ্জ ও মতলব, বরিশাল নদী বন্দর থেকে বরিশাল উলানিয়া, বরিশাল কালিগঞ্জ, বরিশাল কাচারীখাল, ভোলা নদীবন্দর থেকে ইলিশা-মজুচৌধুীরহাট, আলেকজান্ডার-হাকিম উদ্দিন নৌপথ, মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে লঞ্চ ও সিট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। শহরের প্রধান সড়ক, হোটেল মোটেল, সৈকত সড়কসহ প্রায় ৩০টি উপ-সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে ৬ জনের মৃত্যু হয়। ওইদিন, রাত ২টার দিকে শহরতলির ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় পাহাড়ধসে স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমানের পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়।

শুক্রবার রাতেও ভারী বর্ষণ হয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এদিন সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। শহরের প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি কিছুটা কমলেও এখনো কিছু সড়ক জলাবদ্ধ। অতিবৃষ্টির সাথে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় ডুবেছে জেলার শতাধিক গ্রামের নিমাঞ্চল।

জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত কক্সবাজারের জনজীবন। লাখো মানুষ পানিবন্দী। কাজে বের হতে পারছে না কর্মজীবীরা। ঘুরতে এসে কক্সবাজারে হোটেল মোটেলে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার পর্যটক। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে শতাধিক পরিবারকে।

►  জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল কক্সবাজারের জনজীবন।
দুইদিনের অতিবৃষ্টিতে কক্সবাজারের শতাধিক জনপদ পানিতে নিমজ্জিত হয়। একই সঙ্গে পাহাড়ি ঢল ও পানি প্রবেশ করে জেলার বেশকিছু গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

► ৮ ফিশিং ট্রলারসহ নিখোঁজ ৭০ জেলে, ৫ মরদেহ উদ্ধার
শুক্রবারের তুলনায় শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কম রের্কড হয়। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। তবে, জেলা সদরসহ ৬ উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি থাকার খবর পাওয়া যায়।

এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলারসহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছেন মালিকরা। যার মধ্যে, ৫ জনের মরদেহ সাগরের উপকূলে ভেসে এসেছে।

শনিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ, ইনানী ও কলাতলী উপকুলে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ২১০ মিলিমিটার। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টা থেকে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।

 

এফ এ শাহেদ

Link copied!