ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শিক্ষিকাকে শোকজ করায় অধ্যক্ষকে প্রাণনাশের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম

শিক্ষিকাকে শোকজ করায় অধ্যক্ষকে প্রাণনাশের হুমকি

শিক্ষিকা সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

অনিয়মের অভিযোগে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক শিক্ষিকাকে শোকজ করায় সন্ত্রাসী ডেকে অধ্যক্ষকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবাল নামের ওই শিক্ষিকা রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের চীফ ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যথা সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকেন না এবং প্রায় দুই মাস ধরে নিজ ট্রেডে কোন ক্লাস পরিচালনা করেন না তিনি। এনিয়ে তাকে একাধিকবার প্রতিষ্ঠান প্রধান সতর্ক করার পরও তাতে কর্ণপাত করেননি নাহরীনা ইকবাল। এতে বাধ্য হয়ে শোকজড করেন রাজশাহী টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এসএম ইমদাদুল হক। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে অধ্যক্ষকে কিছু ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন নাহরীনা ইকবাল।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রতিবেদকের নিকট চীফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পত্রের (একটি ৫ ও অপরটি ৮ সেপ্টেম্বর) দুটি কপি হাতে এসেছে। গত ৫ সেপ্টেম্বরের অভিযোগ পত্রে উল্লেখ আছে, ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী টিটিসি’র অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ক্লাস রুটিন মনিটরিং করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের চীফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালের ক্লাস থাকলেও তিনি ক্লাসে উপস্থিত না থেকে অন্য রুমে সময় কাটাচ্ছেন। অধ্যক্ষ তাকে মৌখিকভাবে ক্লাসে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি অধ্যক্ষকে অপ্রাসঙ্গিক ও মিথ্যা কথা বলতে থাকেন। অধ্যক্ষ ক্লাসের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি তাতে আপত্তি জানান। পরে প্রতিষ্ঠানের তিনি বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী ডেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে সন্ত্রাসী কায়দায় অধ্যক্ষকে হুমকি প্রদান করেন।

এ নিয়ে অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক ও পরিচালকের নিকট ওই দিনই (৫ সেপ্টেম্বর) একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন। এবং পরবর্তীতে গত ৮ সেপ্টেম্বরে তিনি চীফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালকে দুই দিনের মধ্যে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন। কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস নেওয়ার কথা বলায় আপনি অধ্যক্ষের সাথে আচরবিধি লঙ্ঘন করে রাজশাহী মহিলা টিটিসি’র ওয়ার্কসপ এটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম ও বহিরাগতদের ডেকে টিটিসিতে সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসীকার্যক্রম করার জন্য বহিরাগতদের কেন অত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসলেন এ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা আগামি দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করবেন।

তবে দুই দিন অতিবাহিত হলেও নাহরীনা ইকবাল অধ্যক্ষ বরাবর কোন প্রকারের ব্যাখ্যা প্রদান করেননি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী টিটিসি’র অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক। প্রতিবেদককে তিনি জানান, ওই ট্রেডের (ইলেকট্রনিক্স) এখন এমন অবস্থা যে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসের জন্য আসতে বলা হলেও তারা ক্লাস হয় না বলে আসতে চায় না। তাদের ধারণা, ওই ট্রেডের শিক্ষক নাই; তাই ক্লাসও বন্ধ। এর আগেও তাকে ক্লাস না পরিচালনা করার জন্য তিন বার শোকজড করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো শোকজডের উত্তরও তিনি দেন নি। উল্টো পাশের মহিলা টিটিসি’র ওয়ার্কসপ এটেনডেন্ট মো. শহিদুল ও তার সন্ত্রাসীবাহিনীকে ডেকে নিয়ে এসে আমাকে হুমকিধামকি দিচ্ছেন। এনিয়ে আমি এক প্রকার ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি এবং  মানসিকভাবে প্রচন্ড ট্রমার মধ্যে রয়েছি।

বহিরাগতদের এনে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে  প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি ফোনে কোনো কথা বলতে পারবো না। আপনি সামনাসামনি আসেন, তখন কথা বলবো’। একই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় রাজশাহী টিটিসি’র চীফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালের কাছে। অফিসে অনুপস্থিতি, অফিসে স্বেচ্ছায়-আগমন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ডেকে অধ্যক্ষকে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও শহীদুলের মতো প্রতিবেদককে একই কথা বলেন, ‘আপনার যা জানার ইচ্ছে আছে তা সামনাসামনি এসে বলেন। আমি ফোনে আপনাকে কিছুই বলতে পারবো না’।

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী মহিলা টিটিসি’র অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামের সাথে। বিধিবহির্ভূতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক আইন ভঙ্গ করে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে বহিরাগতদের নিয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে তার অধস্তন কর্মচারী ওয়ার্কসপ এটেনডেন্ট মো. শহিদুল আইন বহির্ভূত কাজ কেনো করলো? জানতে চাইলে মহিলা অধ্যক্ষ বলেন, ‘শহিদুল বেশ প্রভাবশালী। তার বিষয়ে আমি কিছু বলতে বা করতে পারি না। এর আগে শহীদুল সহ কয়েকজনকে কিছু বিষয়ে নিষেধ করায় আমাকে বেশ বিপদে পড়তে হয়। তাই আমি কাউকে ভয়ে কিছু বলতে পারি না’। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে অফিসিয়ালি কোনো শোকড করা হয়েছে কি-না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনি মৌখিকভাবে তাকে এমন কাজে দূরে থাকার জন্য বলা হয়েছে; কিন্তু অফিসিয়ালি তাকে কোনো শোকজড করা হয়নি’।

প্রাতিষ্ঠানিক বিধির লঙ্ঘন ও বহিরাগতদের এনে প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারে জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিচালনা) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টা আমরা তদন্ত করে দেখবো। যেহেতু প্রতিষ্ঠানে একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আর অধ্যক্ষ এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। সুতরাং, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।

আরবি/জেডআর

Link copied!