ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পীরগঞ্জে ফসল চাষে ঝুঁকছে চাষিরা বারোমাস

আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম

পীরগঞ্জে ফসল চাষে ঝুঁকছে চাষিরা বারোমাস

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রংপুরের পীরগঞ্জে বিএমডিএ‍‍`র উপহার কৃষিতে জমির শ্রেণি পরিবর্তনে এনে দয়েছে সবজি চাষ। দলা শ্রেণির  জমি এখন ভিটা হিসাবে সবজি বুনছে চাষিরা। শান নদী খননের ফলে কৃষিতে পরিবর্তন দেখা দিয়েছ। 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , পীরগঞ্জ উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২ টি বিলের হাজার হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা কৃষকদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে ছিল। গত ২ বছর আগেও এলাকার  হাজার হাজার একর কৃষি আবাদি জমি থেকে চাষিরা ফসল ঘরে তুলতে পারতো না। আশায় আশায় চাষিরা ফসল বুনে যায় ভরা মৌসুমে কৃষি জমি থেকে চাষিরা খালি হাতে বাড়িতে ফিরিয়ে আসে। চাষিদের স্বপ্ন ফেরাতে বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) মরা শান বা নলেয়া নদী খননের কাজ হাতে নেয়। প্রায় ১৯ কিলোমিটার নদী খনন কাজ শেষ করে। এতে করে  শোনার ফসল চাষিদের গোলায় উঠছে। মহা আনন্দে এলাকার চাষিরা স্বপ্নের ফসল বুনছে জমিতে। 

খেলা হাটি গ্রামের মৃত  সফর উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক প্রধান বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভর । 

দীর্ঘদিন থেকে রংপুর ও মিঠাপুকুর এলাকা থেকে বৃষ্টির পানি এসে খাল বিলেগুলোর কানায় কানায় ভরপুর হতো। কতিপয় মানুষ ব্রিটিশ আলমের নদী  দখল নিয়ে মাট ভরাট করে প্রবহমান পানির রূপরেখা পাল্টে দিয়েছিল। এতে করে  হাজার হাজার একর কৃষি জমির ফসল সময়ে অসময়ে জলাবদ্ধতার খোরাক হিসাবে খেয়ে নিতো।  ফলে এলাকার কৃষকের জমি থেকেও নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। অনেকই কৃষি কাজ ছেড়ে কাজকর্মের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতো। এটি খননের ফলে নদী তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে সেসাথে চাষিরাও শোনার ফসলের চাষাবাদে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতার পানি গিলে খেয়ে ফেলছে  শান নদী।  নদীর তীরে অনাবাদি  ২৪ কাঠা জমি ছিল যে জমিতে বছরের একবার শুধু মাত্র বোরোধানে বীজ তলা হিসেবে ব্যবহার হতো । নদী খননের কারনে নিচু জমি এখন ভিটা জমি হিসাবে পরিবর্তন হয়েছে। এ বছর আমি ৬ কাঠা জমির ভুট্টা ১২ হাজার টাকা বিক্রি করি। ভুট্টার আবাদ শেষ করে জমিতে হালচাষ দিয়ে শীতকালীন  সবজির চাষ করছি।

একই গ্রামের মৃত এছাব উদ্দিন প্রধান এর ছেলে হবিবার রহমান জানান আমি গত কুড়ি বছর ধরে গরু দিয়ে অন্যের জমি হালচাষ করছি। কেনো দিন এই জমিতে গরু দিয়ে হালচাষ করতে পারেনি। নদীর তীরে মাটি ছাড়িয়ে চাষিরা উঁচু জমি তৈরি বা (ভিটা জমি বানিয়েছে)। এখন আমার হাল ঘুরছে নদীর তীরে ভিটা মাটিতে। এখন বছরে কয়েকপ্রকার কাঁচা মালের আবাদ বা (সবজির চাষাবাদ করা করেছে মানুষ)। 

মেষ্টা গ্রামের রিজু মিয়া জানান, আমরা এলাকার জমিগুলোতে আবাদি ফসল না পেয়ে বড় কষ্টের মধ্যে ছিলাম। উজানের পানি বা বৃষ্টি পানি আর কোথাও আটকে না সোজা নদী দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে  জমিগুলো আমাদের কে হিসাবের চেয়েও বেশি ফসল দিয়ে যাচ্ছে, যে কারনে ফসল উৎপাদন বেড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বহুদিন আগের নদী কতিপয় মানুষ দখল নিয়ে মাঝে মাঝে মাটি ভরাট করার জন্য নদী তার গতি হারিয়ে মরা নদী রুপ নিয়ে ছিল। শানেরহাট, পাঁচগাছি এবং মিঠিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের সংসারে অন্ধকারের প্রদীপ জ্বলছিল। এটি খননের পর থেকেই এলাকার কৃষক ধান, পাট, গম, কচু, আলু, মুলা, পটোল, গাজর, বেগুন, টমেটো, শিম, মরিচ, আদা, রসুন এবং পীরগঞ্জের অর্থকারী ফসল পান, সুপারি চাষে ঝুঁকছে। এখন অন্ধকার দূর করে আশায় আলো দেখছেন চাষিরা। 

খোলাহাটি গ্রামের শ্রী. পরিমল জনান, একসময় শান নদী অনেক বড় ছিল এবং সেই নদী থেকে আমাদের বাপদাদারা মাছ ধরে সংসার চালাতেন, বহুদিন পরে আবার ফিরে পেলাম আমরা সেই নদী। বর্তমানে এই নদীতে ছোট মাছের সংখ্যা বেশি আর এই নদীর মাছ আমাদের লোকজন অনেকেই ধরে বাজার বিক্রি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!