মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের পাশেই মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য পাইলিং করা হয়েছে। পাইলিং কাজে ব্যবহৃত রডে ইতিমধ্যে মরিচিকা ধরে কাশবনে ঢেকে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানে পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। ঝোপ-ঝাড় আর আবর্জনায় ছেয়ে গেছে পুরো জায়গাটি।
মাদারীপুরে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজ অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো মাত্র এক বছরের মধ্যেই। অথচ মাদারীপুরে সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়নি ৫ বছরেও। শুধু পাইলিং করেই ৭০ লাখ টাকার বিল নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার। আর নির্ধারিত সময় কাজ শেষ না হওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের দুষছেন প্রকল্পের সাথে জড়িত কর্তা ব্যক্তিরা।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মাদারীপুর সদর উপজেলায় তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবন এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামে বরিশালের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ঠিকাদারী কাজ পায়।
চুক্তিমূল্য অনুযায়ী ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়। তবে গত ৫ বছরে শুধু পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের যোগসাজশে নাম মাত্র কাজ করে কোটি টাকার বিল তুলে নেয়া হয়েছে। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা শাসমুল আলম নান্নু বলেন, আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল মডেল মসজিদটি উপজেলার ভিতরে জনবহুল স্থানে দেয়া হোক। কিন্তু সেটি না করে উপজেলার দক্ষিণকোনায় নির্জন একটি জায়গায় নির্মাণ কাজ শুরু করে। পরে আমরা স্থানীয়রা বাঁধা দিলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এরাই মধ্যে নাকি ৭০ লাখ টাকার উপরে বিল নিয়ে গেলো ঠিকাদার। এতে গণপূর্ত বিভাগের গাফলতি আছে। তাই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী করছি।’
চলতি বছর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে না বলে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগকে। এদিকে পাইলিং বিল বাবদ তুলে নিয়েছে ৭০ লাখ টাকা।
তবে প্রকল্প পরিচালকের সাথে জড়িত মাদারীপুরের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তার আব্দুর রাজ্জাক রনি বলেন, ‘আমাদের দাবী ছিল মডেল মসজিদটি গণপূর্ত বিভাগের একটি জনবহুল জায়গায় নির্মাণ করার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে একটি নির্জন জায়গায় কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে কাজটি বন্ধও করা হয়। এখন স্থানীয়দের দাবীর কারণে গণপূর্ত বিভাগের ভিতরে যেখানে লোকজনের সমাগম বেশি, সেখানে নির্মাণের কথা চলছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের এগিয়ে আসতে হবে।’
তবে প্রকল্পের নির্মানের কাজে জড়িত পণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি না হলেও মোবাইলে জানান, ‘জায়গা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ঠিকাদারকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার বিল দেয়া হয়েছে। তাদের আরো প্রায় ৩০ লাখ টাকার দাবী রয়েছে। এখন জেলা প্রশাসন থেকে জায়গা নির্ধারণ করা হলে দ্রুতই কাজ করা হবে।’
আর সদ্য বদলীকৃত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলে দাবী, মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হবে। স্থান নির্ধারণ নিয়ে কিছুটা ঝটিলতা হওয়ায় কাজটি বন্ধ ছিল। তবে আমরা কমিটির লোকজন বসে বিষয়টি সমধানের পথে রয়েছে।’ অল্প দিনের মধ্যেই পুনরায় মডেল মসজিদের কাজ শুরু হবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
আপনার মতামত লিখুন :