ঢাকা সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তোফাজ্জেলের সুস্থতা কখনো চায়নি ভাবী শরীফা

তাপস মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম

তোফাজ্জেলের সুস্থতা কখনো চায়নি ভাবী শরীফা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মা-বাবা ও ভাইকে হারানোর পর মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের ভাবি শরীফা আক্তারই ছিল তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। সেই ভাবীই তোফাজ্জলের সঙ্গে করেছেন কুকুর বিড়ালে মত আচরন। তোফাজ্জল সুস্থ থাকুক সে সেটাও কখনও চায়নি ভাবী শরীফা আক্তার। এমনকি মোবাইল চুরির অপবাদের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেন তোফাজ্জলের ভাবী শরীফা। 

তোফাজ্জেলের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হৃদয় স্পর্শী অভিযোগ লিখে মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া তার নিজের ব্যক্তিগত ফেইসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলে একটি মোবাইল চুরির ঘটনায় মাসুদ কামাল তোফাজ্জলকে মর্মান্তিক ভাবে পিটিয়ে হত্যার পর এ সব তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান আলোচনা ও সমালোচনার। তানিয়া তালুকাদ নামের ফেসবুক প্রফাইলে পোস্ট দেয়ার বিষয়টি রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন নিহত আলোচিত তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া।

তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া তার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, তোফাজ্জেল আমার ফুফাতো ভাই + দুধ ভাই (আমরা একই মায়ের দুধ খেয়ে আমরা বড় হইছি)। তোফাজ্জেলকে যারা মেরে ফেলেছে তারা তো অবশ্যই খুনি !! কিন্তু আমার মতে তোফাজ্জেলের আরো দুজন খুনি অপরাধীর নামের খাতা থেকে বাদ পরে গেছে, সেই দুইজন হলো ওর (একমাত্র ভাবী এবং ভাইয়ের শ্বাশুড়ি)। তোফাজ্জেলের পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল ছিলো ওর একমাত্র ভাবী, যে কিনা ওর সাথে কুকুর বিড়ালে মতো আচরন করতো !! তোফাজ্জেল সুস্থ হোক সে সেটা কখনোই চায় নাই, কেন চায় নাই জানেন? কারন তোফাজ্জেল সুস্থ হলে সমস্ত সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে !!

তিনি তার পোস্টে আরও লেখেন, তোফাজ্জেলকে যখন ফজলুল হক হলের ছাত্ররা অত্যাচার করতে ছিলো, তখন অভাগাটা, নিরুপায় হয়ে ভাবীকেই কল দিতে বলেছিলো, হয়তোবা ও ভেবেছিলো ভাবীর মনটা আমার জন্য একটু হলেও কাঁদবে। ওর ভাবী ফোন পেয়ে কি করেছিলো জানেন? সে মোবাইল চোরের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিলো এবং এটাও বলেছিলো যে, তাকে যেন এ ব্যাপারে আর ফোন দেয়া না হয়। এই বলে রাতে ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেছিলো !!!

এছাড়াও তানিয়া আরও লেখেন, তোফাজ্জেলের মৃত্যু পরে একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছে ওর একমাত্র ভাবী !! সে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছে, কান্নার অভিনয় করছে, সব ধরনের সাহায্য সহোযোগিতা সে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে। আমার একটাই প্রশ্ন, সে কোন অধিকারে নিচ্ছে? যে তোফাজ্জেল জীবিত অবস্থা তার থেকে একটু ভালোবাসা পায় নাই, এখন আসছে গার্ডিয়ান হিসেবে। কেন একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাড়িয়েছে জানেন? সে এখন তোফাজ্জেল মৃত্যুর বড় একটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে পারে !! ভাবি এইটুকু মাথায় রাখেন, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না, তোফাজ্জেলের এই অবস্থা পিছনে আপনিও দায়ী।

আসমা আক্তারের পোস্ট করা এমন অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে নিহত তোফাজ্জলের ভাবী শরীফা আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, তোফাজ্জল বেঁচে থাকলে বলতে পারতো কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। তোফাজ্জল প্রায় তিন চার বছর আমার কাছেই ছিল। যখন কিছুটা সুস্থ ছিল তখন সে বিভিন্ন থানায় রাইটিং এর কাজ করেছে। পারিবারিক ভাবে তোফাজ্জলের সাথে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল তা মামাতো বোন দূরে বসে কিভাবে দেখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে তোফাজ্জলের বিচার করতে বলেছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ওই শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে টাকা দাবি করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন তারা। এ সময় আমি তাদেরকে বলি তোফাজ্জল মানসিক রোগী, সে কোনো চোর না তাকে ছেড়ে দিন। এছাড়াও তাদেরকে বলি যদি সে কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে আপনার আইনের আশ্রয় নেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকে রেখে এবং ভাত খাইয়ে নির্যাতিত করে শিক্ষার্থীরা। কয়েক দফায় তাকে মারধর করার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আরবি/জেডআর

Link copied!